
আপনার বাচ্চার মোবাইল দেখার নেশাটা কি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন এখন অনেক বাবা-মায়ের চিন্তার কারণ। এই বিষয়ে মূল্যবান বিশ্লেষণ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ফারজানা পিয়াশ। তিনি জানিয়েছেন, শিশুদের মোবাইল আসক্তির পেছনে রয়েছে বেশ কিছু মনস্তাত্ত্বিক কারণ, যেগুলোর প্রতি আমাদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
নাম্বার ওয়ান:
বাচ্চারা চায় নিজের সময় ও পরিস্থিতি নিজে কন্ট্রোল করতে। মোবাইল এমন একটি জায়গা যেখানে কেউ নিয়ম চাপিয়ে দেয় না, যেখানে তারা নিজের মতো করে সবকিছু পরিচালনা করতে পারে। এটি তাদের কাছে এক ধরনের স্বাধীনতার জায়গা, যা তারা বাস্তব জীবনের অন্য ক্ষেত্রগুলোতে পায় না।
নাম্বার টু:
শিশুদের ভেতরে যদি কোনো ধরনের ইমোশনাল অস্বস্তি থাকে, যেমন একাকীত্ব, দুশ্চিন্তা, মনোমালিন্য, মতপার্থক্য বা দুঃখবোধ তবে তারা এসব অনুভূতির সঙ্গে ঠিকমতো ডিল না করে সেগুলো থেকে পালিয়ে যাওয়ার উপায় হিসেবে মোবাইল ব্যবহার করে। এ পরিস্থিতিতে শিশুকে শেখানো উচিত কীভাবে নিজের অনুভূতিগুলো চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তার বদলে মোবাইলে মন বসিয়ে রাখা ঠিক নয়।
নাম্বার থ্রি:
মোবাইলে থাকা ফাস্ট ও কন্টিনিউয়াস এন্টারটেইনমেন্ট শিশুদের খুব সহজেই আনন্দদায়ক অনুভূতি দেয়। কারণ এই সব কনটেন্ট থেকে ব্রেইনে হ্যাপি হরমোন ‘ডোপামিন’ রিলিজ হয়। এর ফলে অল্পতেই আনন্দ আসে এবং তা বারবার পেতে চায়। বড়রাও যখন এটি কন্ট্রোল করতে পারেন না, তখন ছোটদের ক্ষেত্রে অবস্থা আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মস্তিষ্ক হয়ে পড়ে ‘পপকর্ন ব্রেইনের’ মতো—সবসময় শুধু বিনোদন খোঁজে।
নাম্বার ফোর:
প্রতিটি মোবাইল ডিভাইস এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই এর প্রতি আসক্ত হয়। এটি সহজে বহনযোগ্য, ব্যবহার উপযোগী, যেকোনো জায়গায় এন্টারটেইনমেন্ট পাওয়া যায় এবং যেকোনো তথ্য মুহূর্তেই পেয়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি অভ্যাসে পরিণত হয় এবং তারা মোবাইল থেকে বের হয়ে বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযোগ রাখতে কষ্ট পায়।
ফারজানা পিয়াশ বলেন, “এরকম পরিস্থিতি এড়াতে হলে শুরু থেকেই শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ করাতে হবে। শিশুদের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারা গড়ে তুলতে হবে।”
উল্লেখ্য, ফারজানা পিয়াশ একজন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। তিনি BSc in Psychology এবং MSc in Research in Clinical Psychology (UK) ডিগ্রিধারী। বর্তমানে তিনি NHS, UK-তে মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল হিসেবে কর্মরত।
মিমিয়া