বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করা তরুণ-তরুণীদের জন্য সময়টা যেমন আনন্দের, তেমনই উদ্বেগেরও। জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রাখার উত্তেজনার সঙ্গে থাকে একগাদা দায়িত্ব নিজের বিল মেটানো থেকে শুরু করে কোথায় বসবাস করবেন, এমন নানা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হন।তবে এই উত্তরণের সময়টাকেই কাজে লাগিয়ে তৈরি করা যায় একটি মজবুত আর্থিক ভিত্তি। আর সেই পথেই সাহায্য করতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন অর্থ-বিশেষজ্ঞরা।
জরুরি ফান্ড গড়ে তুলুন
আর্থিক পরিকল্পনায় জরুরি ফান্ড রাখাকে সবসময় গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা। জীবনে হঠাৎ করে এমন খরচ চলে আসতে পারে গাড়ি নষ্ট হওয়া বা পোষা প্রাণীর চিকিৎসা যা সামাল দিতে প্রস্তুতি না থাকলে উচ্চ সুদের ঋণ নিতে হতে পারে।
জেনিথ ওয়েলথ পার্টনার্স-এর সার্টিফায়েড ফিনান্সিয়াল প্ল্যানার অ্যাড্রিয়েন ডেভিস বলেন, “জরুরি দিনের জন্য জমানো টাকা আপনার অনেক বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে।” তাঁর মতে, ‘নিজেকে আগে মেটাও’ এই ধারণা অনুসারে বেতন পাওয়ার পরপরই যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঞ্চয় করা হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা সাধারণত তিন থেকে ছয় মাসের ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ জরুরি ফান্ডে রাখার পরামর্শ দেন। তবে শুরুতে যদি তা কঠিন মনে হয়, তবুও যতটুকু সম্ভব সঞ্চয় করাই ভবিষ্যতের জন্য উপকারী।
জীবনযাত্রার ব্যয় যেন হঠাৎ না বেড়ে যায়
স্নাতক হওয়ার পর ফুল-টাইম চাকরি পেলে অনেকেই হঠাৎ করে খরচ বাড়িয়ে ফেলেন। আগের তুলনায় ভালো খাওয়া, দামি পোশাক কেনা কিংবা নিয়মিত ঘুরতে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয় যাকে বলে ‘লাইফস্টাইল ক্রিপ’।
প্রসপার নামের একটি ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের চিফ ক্রেডিট অফিসার হাইয়ান হুয়াং বলেন, “উপার্জন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচও যদি বাড়ে, তাহলে সেই আয় আর উপকারে আসে না।” তাই খরচের দায়িত্বশীল পরিকল্পনা করা খুব জরুরি।
খরচ কোথায় যাচ্ছে, সেটা বোঝার জন্য বাজেট অ্যাপ বা কোনো খরচ-পর্যবেক্ষণ টুল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ডেভিস।
বিনিয়োগ শুরু করুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব
অবসরের কথা ভাবার মতো সময় এখনো আসেনি এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। যত আগে আপনি বিনিয়োগ শুরু করবেন, তত বেশি উপকার পাবেন চক্রবৃদ্ধি সুদের কারণে।ব্ল্যাকরকের চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট গার্গি চৌধুরী বলেন, “প্রতিটি বছর যা আপনি বিনিয়োগ না করে হারাচ্ছেন, তা ভবিষ্যতে অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।”
চাকরিতে ৪০১(k) প্ল্যান থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই তাতে অবদান রাখার পরামর্শ দেন ডেভিস। এমনকি মাসে সামান্য $১০০ বিনিয়োগ করলেও দীর্ঘমেয়াদে তার সুফল বিশাল হতে পারে। হিসাব বলছে, যদি ২৫ বছর বয়সে কেউ প্রতি মাসে $১০০ বিনিয়োগ করেন এবং বার্ষিক ৭ শতাংশ লাভ পান, তবে ৭০ বছরে তা দাঁড়াবে প্রায় $৩৮০,০০০। অথচ ৩০ বছর বয়সে শুরু করলে তা হবে মাত্র $২৬০,০০০।
কিছু ক্ষেত্রে আপস করতে শিখুন
জীবনের এই পর্যায়ে গাড়ি কেনা, একা থাকার বাসা নেওয়া বা নতুন শহরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকতেই পারে। তবে এসব সিদ্ধান্তের আগে ভাবতে হবে, এতে আপনি ঋণে জড়িয়ে পড়ছেন কি না।
ডেভিস বলেন, “হয়তো আপনি রুমমেট রাখতে চাইছেন না, কিংবা পরিবারে ফিরে যেতে চাচ্ছেন না। তবে ভবিষ্যতের নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে ঋণ accumulating হচ্ছে কি না, সেটা আগে বোঝা দরকার।”
আপনার মাসিক খরচ একবার লিখে ফেললে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়, বলছেন হুয়াং। তিনি বলেন, “সংখ্যাগুলো মাথায় থাকলে দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত কিংবা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতেও সুবিধা হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার পর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার শুরুতেই যেসব সিদ্ধান্ত নেবেন, সেগুলোই ভবিষ্যতের ভিত গড়ে দেয়। তাই সঠিক পথে পা ফেলার জন্য এখনই জরুরি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া। জরুরি ফান্ড তৈরি, খরচে শৃঙ্খলা, বিনিয়োগ শুরু এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত এই চারটি অভ্যাসই হতে পারে আপনার ভবিষ্যতের সাফল্যের চাবিকাঠি। এখন সিদ্ধান্ত আপনার হাতে।
সূত্র:https://tinyurl.com/4apy6n9t
আফরোজা
