ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গরমে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ানক ছত্রাক: ভেতর থেকে গিলে খায় শরীর!

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৫:১৪, ৪ জুন ২০২৫

গরমে ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ানক ছত্রাক: ভেতর থেকে গিলে খায় শরীর!

ছবি: সংগৃহীত (সিএনএন)

বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানবদেহে ভয়ংকর সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম এক ধরনের ছত্রাক (ফাঙ্গাস) দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অঞ্চলে—এবং পৃথিবী এখনও এই হুমকির জন্য প্রস্তুত নয়।

সম্প্রতি ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘Aspergillus’ নামের সাধারণ এক ছত্রাক ভবিষ্যতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চীন ও রাশিয়ার নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। এটি ‘অ্যাসপারজিলোসিস’ নামের এক প্রাণঘাতী ফুসফুসজনিত রোগের জন্য দায়ী।

এই গবেষণা এখনো চলমান, তবে এতে বিশ্বজুড়ে নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকির ইঙ্গিত মিলেছে।

‘ভেতর থেকে গিলে খায় শরীর’

গবেষক নরম্যান ভ্যান রেইন বলেন, ‘দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যদি ব্যর্থ হয়, তখন এই ছত্রাক শরীরের ভেতরে জন্মাতে শুরু করে এবং আক্ষরিক অর্থে দেহকে ভেতর থেকে খেয়ে ফেলতে থাকে।’

এই ছত্রাক মূলত মাটিতে বা কম্পোস্টে সুতোসদৃশ জন্মে এবং বাতাসে ভেসে থাকা কোটি কোটি ক্ষুদ্র স্পোর (spores) ছড়িয়ে দেয়।

আমরা প্রতিদিনই কিছু স্পোর নিই নিশ্বাসের সঙ্গে, তবে সাধারণত তা কোনো সমস্যা তৈরি করে না। তবে হাঁপানি, সিএফ (সিস্টিক ফাইব্রোসিস), ক্যান্সার, অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা করোনার মতো রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য এটি হতে পারে প্রাণঘাতী।

মৃত্যুহার ২০ থেকে ৪০ শতাংশ

অ্যাপারজিলোসিস রোগে মৃত্যুহার ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত, বলছেন গবেষকরা। আর এই রোগ নির্ণয় করাও বেশ কঠিন, কারণ এর উপসর্গ (জ্বর, কাশি) অনেক সাধারণ রোগের সঙ্গে মিলে যায়।

আরও চিন্তার বিষয় হলো, এই ফাঙ্গাস অনেক এন্টিফাঙ্গাল ওষুধের প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বর্তমানে বিশ্বে মাত্র চার ধরনের অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ কার্যকর রয়েছে।

তীব্র গরমে ফাঙ্গাসের সীমা বাড়ছে

গবেষণায় বলা হয়েছে, Aspergillus flavus নামের একটি প্রজাতি—যা সাধারণত গরম ও ট্রপিকাল অঞ্চলে থাকে—ভবিষ্যতে ১৬% বেশি অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। এটি উত্তর আমেরিকা, চীনের উত্তরাঞ্চল এবং রাশিয়ায় বিস্তার ঘটাতে পারে।

এই ফাঙ্গাস শুধু মানুষ নয়, শস্যেও আক্রমণ চালায়—ফলে খাদ্যনিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। ২০২২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ ছত্রাক হিসেবে ঘোষণা দেয়।

অন্যদিকে Aspergillus fumigatus নামের ফাঙ্গাস—যেটি ঠান্ডা পরিবেশে পছন্দ করে—উত্তর মেরুর দিকেও বিস্তার ঘটাতে পারে। ২১০০ সালের মধ্যে এর বিস্তার বাড়তে পারে ৭৭.৫% পর্যন্ত, যাতে প্রায় ৯ মিলিয়ন ইউরোপিয়ান নাগরিক আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।

ছত্রাকও বদলে নিচ্ছে শরীরের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু পৃথিবী নয়, ফাঙ্গাসগুলোর ভেতরের জেনেটিক গঠনও পরিবর্তিত হচ্ছে। তারা মানুষের শরীরের উষ্ণতায় টিকে থাকার দক্ষতা অর্জন করছে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ—যেমন খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদিও ছত্রাক ছড়ানোর অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জপলিন শহরের টর্নেডোর পর ব্যাপক হারে ছত্রাক সংক্রমণ ঘটেছিল।

বিশ্ব প্রস্তুত নয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য ও সংক্রমণ বিশ্লেষকরা বলছেন, ছত্রাকজনিত রোগ নিয়ে এখনও গবেষণা ও সচেতনতা খুবই কম। চিকিৎসকরা অনেক সময় এসব রোগ শনাক্তই করতে পারেন না।

‘দ্য লাস্ট অব আস’ নয়, বাস্তব জীবন হুমকি

এই ছত্রাক নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয় HBO-এর জনপ্রিয় সিরিজ ‘The Last of Us’ এর পর, যেখানে মিউট্যান্ট ফাঙ্গাসে আক্রান্ত মানুষ ভয়ংকর দানবে পরিণত হয়। যদিও সিরিজটি কাল্পনিক, তবে গবেষকরা বলছেন—বাস্তবে ছত্রাক মানুষকে প্রাণঘাতী সংক্রমণে ফেলছে, এবং এটি ঠেকাতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

 

সূত্র: সিএনএন।

রাকিব

×