ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্যাকেটজাত খাবারের বড় লেখা বিশ্বাস না করে লেবেল দেখুন

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ৪ জুন ২০২৫

প্যাকেটজাত খাবারের বড় লেখা বিশ্বাস না করে লেবেল দেখুন

ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, যেসব আর্টিফিশিয়াল সুইটনার—যেমন আসপারটাম বা এজাতীয় অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান—নিয়মিত বা নির্ধারিত মাত্রার বেশি গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। শুধু তাই নয়, এসব উপাদান মস্তিষ্কে ‘ব্রেন ফগ’, ইনফ্লামেশন বা সংক্রমণেরও কারণ হতে পারে। অথচ অনেকেই ভাবেন, “জিরো সুগার” লেখা মানেই খাবারটি নিরাপদ—কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন।

আমরা যখন কোনো প্যাকেটজাত বা ক্যানজাত খাবার কিনি, তখন প্যাকেটের ওপর বড় হরফে লেখা “হেলদি”, “প্রোটিন রিচ”, “অল ন্যাচারাল” বা “স্কিন গ্লো করবে” জাতীয় ফ্রেজগুলোর উপর সহজেই বিশ্বাস করে ফেলি। কিন্তু খুব কম মানুষই নিউট্রিশন লেভেলের দিকে তাকিয়ে দেখে আসল সত্যটা কী।

নিউট্রিশন লেভেল কেন গুরুত্বপূর্ণ?
খাদ্য উপাদানের তথ্য তালিকায় (নিউট্রিশন লেভেল) সাধারণত উল্লেখ থাকে প্রতি ‘সার্ভিং’-এ আপনি কত ক্যালরি, ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, সোডিয়াম, সুগার, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার ও ভিটামিন পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা অনেকেই এই তালিকাটি দেখি না, বা দেখলেও বুঝতে পারি না। কারণ একটাই—এগুলো আমাদের কাছে অনেক সময় ‘হিব্রু ভাষা’র মতোই জটিল মনে হয়।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো একটি প্রোটিন বার কিনলেন। কিন্তু সেখানে সুগার, কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকতে পারে। তাই প্রোটিন নেয়ার চেয়ে আপনার শরীরে বাড়তি ক্যালরি ঢুকে পড়ছে। আবার, “জিরো সুগার” লেখা থাকলেও কার্বোহাইড্রেটের মাধ্যমে শরীরে গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ বা সুক্রোজ চলে আসছে—যা অতিরিক্ত হলে ডায়াবেটিস বা ওবেসিটির কারণ হতে পারে।

গোপন বিপদ: সার্ভিং সাইজ ও হিডেন ক্যাফেইন
আরেকটি বড় ভুল আমরা করি সার্ভিং সাইজ বুঝতে না পেরে। আপনি হয়তো এক কাপ বা এক পিস খাবারের ক্যালরি দেখলেন ১০০ ক্যালরি। কিন্তু পুরো প্যাকেটে যদি ১০টি সার্ভিং থাকে, তবে আপনি একসাথে ১০০০ ক্যালরি খেয়ে ফেললেন—যা কিনা একটি বড় বিপদ!

তেমনি হিডেন ক্যাফেইনের বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি হয়তো ভাবছেন দিনে দুই কাপ কফি খেলেন, কিন্তু পাশাপাশি এনার্জি ড্রিংক বা ইলেকট্রোলাইট ড্রিংকে থাকা ক্যাফেইন আপনার শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় ঢুকে পড়ছে।

যা করণীয়: সচেতন হোন, বিকল্প বেছে নিন
জিরো সুগার লেখা দেখলেই খাবেন না—প্রথমে দেখুন কার্বোহাইড্রেট কত আছে, সেটা গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ না অন্যকিছু?

প্রোটিন বার খেলেই হবে না—সাথে থাকা ফ্যাট ও সুগার কনটেন্ট চেক করুন।

নিউট্রিশন লেভেল পড়ুন মনোযোগ দিয়ে—বিশেষতঃ সুগার, সোডিয়াম, ট্রান্সফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেন কম হয় এবং প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বেশি থাকে।

সার্ভিং সাইজ দেখে খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করুন—এক বসায় পুরো প্যাকেট খেলে ক্যালরি ইনটেক অনেক বেড়ে যেতে পারে।

আর্টিফিশিয়াল সুইটনার এড়িয়ে চলুন, এবং সুগারের বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্লান্ট-বেইস কার্বোহাইড্রেট বেছে নিন।

হোল গ্রেইন বা হোল হুইট নাম দেখলেই খাবেন না—নিউট্রিশন লেভেলে 'হোল' শব্দটি আগে আছে কি না নিশ্চিত হোন।


প্যাকেটজাত, ক্যানজাত বা রেডিমেড খাবার খাওয়ার আগে পেছনের লেবেলটি ভালো করে দেখুন। 'অল ন্যাচারাল' বা 'হেলদি' লেখা থাকলেই সেটি আপনার জন্য উপকারী এমন নয়। যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক ও হোমমেড খাবার গ্রহণ করুন—আপনার শরীর তখনই বেশি সুস্থ ও সজীব থাকবে।

ফরিদ

×