
ছবি: সংগৃহীত
কমিক বইয়ের দুনিয়ায় যেসব অতিমানবীয় শক্তির কথা বলা হয়, তার অনেকটাই বাস্তব জীবনে অর্জন সম্ভব—এমনই এক অভাবনীয় বিষয় উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। গবেষকরা বলছেন, মানুষ চাইলেই ব্যাট বা ডেয়ারডেভিল সুপারহিরোর মতো ‘সাউন্ড দিয়ে চারপাশ বুঝে ফেলার (এক প্রকার ইকোলোকেশন) ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের মস্তিষ্কে রয়েছে চমকপ্রদ অভিযোজন ক্ষমতা, যা ধ্বনির প্রতিধ্বনি বিশ্লেষণ করে পরিবেশ সম্পর্কে বিশদ ধারণা গড়ে তুলতে পারে। যদিও এটি আমাদের জন্মগত নয়, তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই দক্ষতা রপ্ত করা সম্ভব।
এই দক্ষতা রপ্ত করে যিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত হয়েছেন, তিনি হলেন ড্যানিয়েল কিশ। জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন কিশের চোখ ক্যান্সারের কারণে অপসারণ করা হয়। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তিনি জিহ্বা ও তালু দিয়ে ক্লিকিং সাউন্ড তৈরি করে প্রতিধ্বনির সাহায্যে আশেপাশের জিনিস শনাক্ত করতে শিখে ফেলেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিশ এই দক্ষতা এতটাই রপ্ত করেছেন যে, তিনি একা একা অচেনা শহর ঘুরে বেড়াতে পারেন, বনের পথে হাইকিং করেন, এমনকি বাইসাইকেল চালান দৃষ্টিশক্তি ছাড়াই। ২০১৫ সালে এক TED Talk-এ তিনি ব্যাখ্যা করেন কিভাবে মস্তিষ্ক "শব্দকে দেখায় রূপান্তরিত" করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেমন বাদুড় শব্দের প্রতিধ্বনির মাধ্যমে দেয়াল, গাছ, কীটপতঙ্গ শনাক্ত করতে পারে, তেমনই ধ্বনির প্রতিফলনের ভিত্তিতে মানুষও বস্তুর দূরত্ব, আকার, এমনকি গতিবিধি বুঝে নিতে পারে।
এই পদ্ধতির নাম Human Echolocation, এবং এটি নির্দিষ্ট ধরণের প্রশিক্ষণ, অনুশীলন ও ধৈর্যের মাধ্যমে শিখে নেওয়া যায়।
এই গবেষণা শুধু দৃষ্টিহীনদের জন্য নয়, বরং এটি আমাদের ধারণা বদলে দিচ্ছে যে কীভাবে মানুষের ইন্দ্রিয় ব্যবস্থা পরিবর্তনশীল ও প্রশিক্ষণযোগ্য। এমনকি ভবিষ্যতের কৃত্রিম প্রযুক্তি ও সাইবোর্গ ডিভাইসের বিকাশেও এই প্রাকৃতিক পদ্ধতির ধারণা অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
মুমু