
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও নতুন উত্তেজনা। নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিস্ফোরক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান পরমাণু আলোচনা গোপনে বানচালের চেষ্টা চালিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাঝেও ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিলেন নেতানিয়াহু, যাতে আলোচনার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, নেতানিয়াহু শান্তিপূর্ণ চুক্তির পক্ষে নন, বরং তিনি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম ধ্বংস করতে চান। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক পর্যায়ে নেতানিয়াহুকে স্পষ্টভাবে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, তিনি যেন ইরানের পরমাণু স্থাপনায় একতরফা হামলা না চালান। মার্কিন প্রশাসনের আশঙ্কা ছিল, এমন একটি পদক্ষেপ পুরো আলোচনা ভেস্তে দিতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের সূচনা ঘটাতে পারে।
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মধ্যে এ নিয়ে একটি উত্তপ্ত ফোনালাপ হয় বলেও জানিয়েছে টাইমস। সেখানে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেন, “যদি তুমি এটা করো তবে সেটা চুক্তির সম্ভাবনাকে শেষ করে দেবে এবং আমেরিকার কূটনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।”
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর অবশ্য এই প্রতিবেদনের অভিযোগ অস্বীকার করে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ইসরাইল কেবলমাত্র নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছে।”
তবে মার্কিন প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার মতে, নেতানিয়াহুর সামরিক হুমকি ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার গতিপথকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলোও জানিয়েছে, এই ইস্যুতে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মধ্যে একাধিক উত্তপ্ত ফোনালাপ ও উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র মধ্যকার এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে ওমানের শাসকগোষ্ঠী। এ পর্যন্ত মাস্কাট ও রোমে মোট পাঁচ দফা বৈঠক হয়েছে, যার তিনটি হয়েছে সরাসরি ওমানে। আলোচনার মধ্যস্থতা করছেন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আল বুসাইদী। ষষ্ঠ দফা বৈঠকের তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
ইরান তাদের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চায় এবং তার বদলে কিছু পরমাণু কার্যক্রম সীমিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে তারা শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তির অধিকার বজায় রাখতে চায়। অন্যদিকে ইসরাইল জোর দিয়ে বলছে, পরমাণু ইস্যুতে কেবল কূটনৈতিক চাপ যথেষ্ট নয়—সামরিক হুমকিও থাকা জরুরি।
কিন্তু ইসরাইলের এই মনোভাবই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে নতুন টানাপড়েন তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার বর্তমান অবস্থা এখন এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে—একদিকে সম্ভাব্য শান্তিপূর্ণ চুক্তি, অন্যদিকে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে সামরিক পথের আহ্বান। এই দুই বিপরীত অবস্থানের সংঘর্ষেই নির্ধারিত হবে মধ্যপ্রাচ্যের পরমাণু ভবিষ্যৎ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির এমন টানটান পরিস্থিতিতে বিশ্ববাসী এখন অপেক্ষা করছে পরবর্তী পদক্ষেপের—শান্তিপূর্ণ চুক্তি, না কি আরেকটি ভয়াবহ সংঘাত?
ফরিদ