ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিশুর ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে এই একটিমাত্র দক্ষতা! মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্রেন ডেভেলপমেন্টে এটি সবচেয়ে কার্যকর উপায়

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:১৯, ১ জুন ২০২৫

শিশুর ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে এই একটিমাত্র দক্ষতা! মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্রেন ডেভেলপমেন্টে এটি সবচেয়ে কার্যকর উপায়

শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে আমরা কত কিছুই না করতে চাই। পড়াশোনা, ক্রীড়া, নানাবিধ সহশিক্ষা কার্যক্রম সব কিছুর পেছনেই আমাদের লক্ষ্য থাকে একটি সুস্থ, সফল ও পরিপূর্ণ মানুষ গড়ে তোলা। তবে মনোবিজ্ঞানের এক বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, এমন একটি দক্ষতা আছে যা আপনি যদি সন্তানকে যত দ্রুত সম্ভব শেখাতে পারেন, তাহলে সে জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্য পেতে পারে। আর এই দক্ষতাটি হলো সঙ্গীত চর্চা, বিশেষ করে যেকোনো একটি বাদ্যযন্ত্রে অভ্যস্ত হওয়া।

৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব ও কর্মক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করা একজন মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, শিল্পচর্চা মানুষের জীবনে গভীর পরিবর্তন এনে দিতে পারে। এমনকি অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসও ১৯৯৫ সালে পিবিএস ডকুমেন্টারিতে বলেছিলেন, ম্যাকিনটশ কম্পিউটারের সাফল্যের পেছনে যারা কাজ করেছিলেন, তারা শুধু প্রযুক্তিবিদই ছিলেন না, তারা ছিলেন কবি, সংগীতশিল্পী, ইতিহাসবিদ কিংবা প্রাণীবিজ্ঞানীও।

তবে সব শিল্পের মধ্যে বাদ্যযন্ত্র চর্চা সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ। কারণ এটি আমাদের মস্তিষ্কের একাধিক অংশকে একযোগে সক্রিয় করে মোটর নিয়ন্ত্রণ, প্যাটার্ন চিনতে পারা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সৃজনশীলতা ও ধৈর্য।

কেন বাদ্যযন্ত্র শেখা আপনার সন্তানের জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ?
সফলতা কল্পনা করা হয়ে ওঠে সহজাত অভ্যাস।সঙ্গীতশিল্পীরা শুধু অনুশীলনই করেন না, তারা কল্পনাও করেন মঞ্চ, সুর, অনুভব, সব কিছু। এই কল্পনাশক্তিই জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে।

সময়ের প্রতি তৈরি হয় এক গভীর উপলব্ধি
অনুশীলনের সময়ই শিশু বুঝতে শেখে, সময় আসলে কেমন মূল্যবান। একটুখানি অমনোযোগের কী ক্ষতি হতে পারে আর পুরো মনোযোগ দিলে কী বিস্ময়কর কিছু ঘটে—এটা সে অনুভব করে। এটি জীবনের সব ক্ষেত্রেই সময় সচেতনতা তৈরি করে।

অস্বস্তি থেকে পালানো নয়, তার মুখোমুখি হওয়া শেখে
সঙ্গীতচর্চায় এমন কিছু অংশ থাকে যা বাজাতে কষ্ট হয়, বিরক্তিকর লাগে। কিন্তু ফাঁকি দেওয়ার উপায় নেই। এই অনুশীলনই শেখায় কষ্টের মাঝেই উন্নতির পথ খুঁজে নিতে।

শেখে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে
বাদ্যযন্ত্র শুধু শব্দ নয়, এটি আপনার অভ্যন্তরীণ অবস্থাকে প্রভাবিত করে। নিঃশ্বাস, তাল, ছন্দ সব কিছু দিয়ে আবেগকে নিয়ন্ত্রণের শক্তি জন্মায়, যা জীবনের বহু জটিল মুহূর্তে কাজে আসে।

বিভ্রান্তি নয়, লক্ষ্য খোঁজার পাঠ শেখায়
অনুশীলন যখন একঘেয়ে লাগে, সেটি বলে দেয় আপনার লক্ষ্য ঠিক নেই। সঙ্গীত শেখে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে, এবং ছোট ছোট অগ্রগতির ভেতরেই খুঁজে নিতে আনন্দ।

অসুবিধাকে রূপান্তরিত করে উদ্ভাবনে
হয়তো আঙুল পৌঁছাচ্ছে না, সুরটা বাজছে না ঠিকভাবে তখনই সৃষ্টি হয় নতুন কিছু। নিজেই আবিষ্কার করতে শেখে পথ। শেখে যদি মানচিত্র না থাকে, তবে নিজেই মানচিত্র তৈরি করতে হয়।

মানের প্রতি তৈরি হয় উচ্চ প্রত্যাশা
একবার আপনি পার্থক্য বুঝে ফেললে "ভালো" আর "অসাধারণ" এর মাঝে, তখন আর মাঝারি মানে সন্তুষ্ট থাকা যায় না। সঙ্গীত শেখায় নিখুঁত না হলেও সর্বোচ্চটা দেওয়ার অভ্যাস।

নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য সৃষ্টি করার শিক্ষা দেয়
একজন সংগীতশিল্পী সবসময় কল্পনা করে তার শ্রোতাদের—সে মুগ্ধ করতে চায়, ছুঁয়ে দিতে চায়। এই অভ্যাস ভবিষ্যতে জীবনের অন্য যেকোনো কাজেও দায়িত্ব ও অর্থবোধ তৈরি করে।

কীভাবে আপনার সন্তান বা আপনিও বাদ্যযন্ত্র শেখা শুরু করতে পারেন?
প্রায় যেকোনো বয়সেই নতুন কোনো বাদ্যযন্ত্র শেখা সম্ভব। মস্তিষ্কের নমনীয়তা আমাদের এই সক্ষমতা দেয়।

প্রথমে এমন একটি যন্ত্র বেছে নিন যেটি আপনার বা সন্তানের মনে সাড়া দেয়। কারণ আবেগই এখানে চালিকাশক্তি। এরপর প্রতিদিন অন্তত ২০ মিনিট মনোযোগ সহকারে অনুশীলন করুন। বিজ্ঞান বলছে, প্রতিদিনের এই অল্প অনুশীলনেই মস্তিষ্কে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে।

এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সন্তানের পারফরম্যান্স নয়, অগ্রগতি উদ্‌যাপন করুন। আজ সে যা শিখল, যা গতকাল পারত না সেই অল্প উন্নতিটাই কাল পরিণত হবে দক্ষতায়।


শিশুর ভবিষ্যতের জন্য বড় বড় স্বপ্ন দেখার আগে ছোট একটি বাদ্যযন্ত্র হাতে তুলে দেওয়াই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর বিনিয়োগ। সৃজনশীলতা, ধৈর্য, আবেগ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে নেতৃত্বের গুণ সব কিছুর বীজ লুকিয়ে থাকে সঙ্গীতচর্চার মধ্যেই। এখনই শুরু করলে, বদলে যেতে পারে তার জীবন।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/42wf9muv

আফরোজা

×