
ছবি: প্রতীকী
চুল পড়া, রুক্ষতা কিংবা পাতলা চুল— এইসব সমস্যার সমাধানে আজও অনেকেই ভরসা রাখেন দাদি-নানিদের যুগের প্রাকৃতিক উপায়ে। রান্নাঘরের চেনা উপাদান ঘি ও সরিষার তেল বহু প্রজন্ম ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো— দ্রুত ও দৃশ্যমান চুল গজানোর জন্য কোনটি বেশি কার্যকর?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘি এবং সরিষার তেল— দু’টিই চুলের জন্য উপকারী। তবে কোনটি আপনার জন্য সঠিক হবে, তা নির্ভর করবে আপনার চুলের ধরন, মাথার ত্বকের অবস্থা এবং নির্দিষ্ট চুলের সমস্যার উপর।
ঘি: শুষ্কতা দূর ও গভীর পুষ্টির উৎস
ঘিতে রয়েছে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড, পাশাপাশি ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে— যা শুষ্ক ও ফ্লেকি স্ক্যাল্পে গভীর পুষ্টি জোগায়। এছাড়া ঘির স্যাচুরেটেড ফ্যাট মাথায় রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ফলে চুলের ফলিকল সক্রিয় হয় ও চুল গজানো ত্বরান্বিত হয়।
চুল দুর্বল হয়ে গেলে ঘি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে, চুলে আর্দ্রতা ধরে রাখে ও স্প্লিট এন্ড কমায়। ঘির অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ মাথার ত্বকে প্রশান্তি এনে খুশকি ও চুল পড়া হ্রাস করে।
ব্যবহারবিধি: ১-২ চামচ ঘি হালকা গরম করে চুলে ও স্ক্যাল্পে মালিশ করে অন্তত এক ঘণ্টা রেখে দিন, তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সরিষার তেল: ফলিকল উদ্দীপনায় কার্যকর
সরিষার তেলে রয়েছে সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন— যা মাথার ত্বকে উষ্ণতা সৃষ্টি করে রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং ফলিকলকে উদ্দীপিত করে দ্রুত চুল গজাতে সাহায্য করে।
এতে থাকা অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে, মাথার ত্বকের ইনফেকশন প্রতিরোধ করে খুশকি, উকুন ও চুলকানি কমায়।
প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ এই তেল চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মজবুত করে, ভাঙা চুল ও অসময়ে পাকাও রোধে সহায়ক।
ব্যবহারবিধি: হালকা গরম করে মাথায় মালিশ করে কয়েক ঘণ্টা বা সারা রাত রেখে দিন। এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
তাহলে কোনটি বেছে নেবেন?
যদি আপনার চুল শুষ্ক, রুক্ষ বা ভঙ্গুর হয়ে থাকে, তাহলে ঘি-ই উপযুক্ত। এটি স্ক্যাল্প মেরামত করে, চুলে কোমলতা আনে এবং নতুন চুল গজানোর পরিবেশ তৈরি করে।
অন্যদিকে, চুল পড়া, পাতলা চুল বা মাথার ত্বকে চুলকানি হলে সরিষার তেল হবে আপনার সঠিক সঙ্গী। এটি ফলিকলকে দ্রুত সক্রিয় করে ও দৃশ্যমান ফল দেয়।
একসাথে ব্যবহারেও মিলবে দারুণ উপকার
ঘি ও সরিষার তেল ১:১ অনুপাতে মিশিয়ে হালকা গরম করে ব্যবহার করলে দুটো তেলেরই গুণ পাওয়া যায়। এই মিশ্রণ চুলে পুষ্টি জোগায়, স্ক্যাল্প উদ্দীপিত করে ও ইনফ্ল্যামেশন কমায়।
তবে মনে রাখবেন, শুধু তেল ব্যবহার করলেই হবে না। এর সঙ্গে প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা, পুষ্টিকর খাবার এবং হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলা। কারণ, আপনার চুলও আপনার শরীরের মতোই যত্ন দাবি করে— নম্র, প্রাকৃতিক ও নিয়মিত যত্নে পূর্ণ।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এম.কে.