ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উদ্বোধনের পাঁচ বছরেই সাগরে বিলীনের শঙ্কায় কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্ক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ৪ জুন ২০২৫

উদ্বোধনের পাঁচ বছরেই সাগরে বিলীনের শঙ্কায় কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্ক

এবার কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্ক (ডিসি পার্ক) সাগরে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে উদ্বোধন করা পর্যটকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি পাঁচ বছরেই নিশ্চিহ্নের শঙ্কায় পড়ল। ট্যুরিজম পার্কের সামনের রাস্তাটি গত বৃহস্পতিবারের জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত হওয়ার পরেই এমন শঙ্কায় পড়েছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। তবে এটি সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন উপজেলা প্রশাসন।

এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে পটুয়াখালীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেছিলেন, এই পার্কটি নির্মাণে পর্যটক তার প্রত্যাশা-প্রাপ্তির সুখকর মুহূর্ত উপভোগের সুযোগ পাবেন। কুয়াকাটার পর্যটকদের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ করে দেওয়ায় সাগরপারের মানুষসহ সকল পর্যটক-দর্শনার্থীরা উৎফুল্ল হয়েছিলেন। তবে এটি পরিপূর্ণভাবে ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়া নিয়ে পর্যটকরা কিছুটা ক্ষুব্ধ রয়েছেন। কারণ, এটির উদ্বোধন হলেও কখনও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হয়নি।

কুয়াকাটার উন্নয়নের অংশ হিসেবে এই ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করা হয়। বেড়িবাঁধের বাইরে সৈকত লাগোয়া নারকেল বাগানের মধ্যে খালি জায়গায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট প্রস্থ এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে এক কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে সাগরপারে দৃষ্টিনন্দন পার্কটি নির্মিত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি পার্কটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান। তখন বলা হয়েছিল, পার্কটি ব্যবহারে পর্যটকের থাকছে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা। সাগরে গোসল করতে নামার আগে পর্যটকরা পার্কটিতে থাকা লকার ব্যবহার করতে পারবেন। যেখানে জুতো-স্যান্ডেল, মোবাইল, টাকা-পয়সাসহ সবকিছু গচ্ছিত রাখতে পারবেন। নামমাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে এ লকার ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। অন্তত দুইশ’ লকার থাকবে। পার্কটি বাউন্ডারি ঘেরা। টিনশেড আধুনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ একতলা আলাদা বিশ্রামাগার থাকবে। সেখানে সোফার ব্যবহার থাকবে। বসেই উত্তাল সমুদ্র দর্শন করতে পারবেন পর্যটক। সাগরে গোসল শেষে হাত-পা ধোয়ার জন্য পানির সরবরাহ লাইনসহ অসংখ্য ট্যাপ থাকবে। পুরুষ ও নারীদের আলাদাভাবে পোশাক পরিবর্তনের মতো স্পেস নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। আলাদা প্রস্রাবখানাসহ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুবিধাসংবলিত ওয়াশরুম, ৫০ সিটের কফি হাউস থাকবে। প্রায় ৪০ ফুট দীর্ঘ দুই সারিতে কফি হাউসের আড্ডায় বসতে পারবেন আগতরা। থাকবে ক্যাফে কর্নার। এমনকি প্রতি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ কনসার্টের ব্যবস্থা থাকবে এ পার্কটিতে। এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ পার্কে বিশাল আকৃতির স্থায়ী ছাতা থাকবে। যার নিচে পর্যাপ্ত সংখ্যক চেয়ার থাকবে। থাকবে বেঞ্চ। পার্কটি সবসময় প্রশাসনিক নিরাপত্তার আওতায় থাকবে। পার্ক অভ্যন্তরে বিশেষ কারণে পর্যটকরা রাত্রিযাপনেও সুযোগ পাবেন। এমনকি পার্ক সংলগ্ন সৈকতে বোল্ডার দিয়ে সাগরের ঢেউয়ে বেলাভূমি ক্ষয়রোধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এসবের অনেকটাই বাস্তবায়ন হয়নি। পর্যায়ক্রমে করার কথা বলা হয়েছে। তবে এই পার্কটি ঘিরে কুয়াকাটায় বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান উৎসবমুখর পরিবেশে করা হয়েছে। যেটি ছিল প্রাণবন্ত।

তবে ট্যুরিজম পার্কটির সামনে সাগরপারে উত্তাল ঢেউয়ে বীচের বেলাভূমির ক্ষয় বন্ধে জিও ব্যাগ-টিউব দেওয়া হয়েছে। এ পার্ক ঘিরে কুয়াকাটায় আসা পর্যটক-দর্শনার্থীর বিনোদনকেন্দ্রিক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছিল। এছাড়া সাগরে গোসলের আগে কিংবা পরে যে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হতো তা লাঘব হবে—এমনটিই বলা হয়েছিল। স্বাচ্ছন্দ্যে সাগর উপভোগের সুযোগ সৃষ্টির কথা জানানো হয়েছিল উদ্বোধনকালে। কিন্তু দৃশ্যমান সবটা হয়নি। পাশাপাশি এটিকে ঘিরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ রয়েছে। অনেকেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। সবশেষ গেল বছর পার্কের সামনে থেকে ঝাউবাগান পর্যন্ত ১,৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি রাস্তার নির্মাণকাজ চলমান ছিল। যেটি জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে সাগরে বিলীন হওয়ায় এখন এই ট্যুরিজম পার্কটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার শঙ্কা করছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা। কেউ কেউ কুয়াকাটার উন্নয়নকে হরিলুটের সঙ্গে তুলনা করেছেন। 

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মোতালেব শরীফ জানান, জেলা প্রশাসন ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করায় পর্যটকের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি সাগরে বিলীনের শঙ্কায় পড়েছে। এভাবে সাগরে একের পর এক বিভিন্ন স্থাপনা, জেলেপল্লি, নারকেল বাগান বিলীন হলেও কর্তৃপক্ষ সৈকত রক্ষায় স্থায়ী কোনো প্রতিরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন না করায় তারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম জানান, ট্যুরিজম পার্কটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে ইতিপূর্বে জিও ব্যাগ, জিও টিউবের প্রটেকশন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিধ্বস্ত সড়কটি পরিকল্পিতভাবে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রটেকশন দিয়ে মেরামতের পরিকল্পনার কথা জানান। এছাড়া কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্প ডিপিপি আকারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক আগেই পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

সানজানা

×