ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেনজীর, মনিরুলের নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি পুলিশ কর্মকর্তারাও

প্রকাশিত: ০৮:২০, ৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৮:৪০, ৬ জুন ২০২৫

বেনজীর, মনিরুলের নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি পুলিশ কর্মকর্তারাও

ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ বাহিনীর কিছু ‘দলীয় তল্পিবাহক’ সদস্যের কারণেই শেখ হাসিনা ‘চরম স্বৈরাচার’ হয়ে উঠেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ রেজাউল করিম। একটি বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিরোধী মত দমনে পুলিশের কিছু সদস্য জঙ্গী ও গাড়ি পোড়ানোর নাটক মঞ্চস্থ করত।’

২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরই বিরোধী মত ও দলগুলোকে দমনে নানামুখী পায়তারা শুরু করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে অন্যতম ছিল মিথ্যা হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা, যার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধতন কিছু কর্মকর্তা। এদের মধ্যে অন্যতম সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও হাবিবুর রহমান, প্রলয় জোয়ারদার, বিপ্লব কুমার সরকার এবং ডিবি প্রধান হারুন আর রশিদসহ আরো অনেকে।

পুলিশ বাহিনীর মধ্যে তারা সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করেন। পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ রেজাউল করিম জানান, উচ্চাভিলাষী এসব কর্মকর্তা এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে, খোদ বাহিনীর সদস্যরাও তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি।

তিনি বলেন, ‘হারুন, মনি, প্রলয় জোয়ারদার, বিপ্লব এরকম কিছু অফিসার মানে তাদের রোলটা ছিল তারা মোর দেন পুলিশ বাহিনীর প্রধানের থেকে তাদের ক্ষমতা ছিল। তারা অফিসারদের যে কীভাবে নির্যাতন করতো, যেমন ধরেন আমার তিন ব্যাচ জুনিয়রকে এনে হয়তো আমার উপরে বসায় দিল। এইভাবে শুধু আমি না এখন যারা সিনিয়র লেভেলে আছেন পুলিশে সবারই কিন্তু একই অবস্থা ছিল। একজন অফিসারের যে মেধা সেটাকে কিন্তু কাজে লাগানোর উদ্যোগ তাদের কখনো আমরা দেখি নাই।’

ইসলামী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের উপর জঙ্গি নাটকের মাধ্যমে গুম, হত্যা ও নির্যাতন চালানো হতো। এছাড়া বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ফাঁসাতে পুলিশ নিজেই গাড়ি পোড়ানোর নাটক তৈরি করত। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা বেছে নিত গুম ও ক্রসফায়ারের মত জঘন্য কর্মকাণ্ডকে। যার ফলে পুলিশ বাহিনী দেশের মানুষের কাছে ভিলেনে পরিণত হয়। তবে সেই সংকট এখন আর নেই বলে জানান উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন নাটক, যেগুলোর আসলে বাস্তবে কোন ভিত্তি নাই। কোন একটা ঘটনা ঘটাতো নিজেরাই, গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া বা অপোনেন্ট যারা আছেন, কখনো বিএনপি, কখনো জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, যাকে যেভাবে দরকার ৩০০/৪০০ মামলা দিয়ে মানুষকে যত রকমের হ্যারাসমেন্ট করা যায়, তারা সেটা করেছে।’

অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত ১৬ বছরে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কোন জবাবদিহিতা ছিল না। এমনকি এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক মোহাম্মদ তৌহিদুল হক। অপরাধী পুলিশ  সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে তৃতীয় কোন পক্ষ বা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত এবং কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পক্ষে মত দেন তিনি।

‘আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে মনোবল অনেক বড় ভূমিকা পালন করে’ উল্লেখ করে তৌহিদুল হক বলেন, ‘এজন্য প্রয়োজন পুলিশের নৈতিক ভিত্তিকে আরো মজবুত ও শক্তিশালী করা।’

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=AVXIzRP3Jbc

রাকিব

আরো পড়ুন  

×