
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রাক্তন ব্রিটিশ আর্মি কমান্ডো ম্যাট জোন্স নিজের অসুস্থ শরীর আর ভাঙা মন নিয়ে সম্প্রতি শেষ করেছেন এক অবিশ্বাস্য অভিযান। স্ত্রীর সাথে করা এক ব্যতিক্রমী বাজি থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রায় তিনি কাঁধে প্রায় ৩৭ কেজি ওজনের একটি ফ্রিজ বহন করে ৭০ মাইল পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়েছেন—সবকিছুই করেছেন স্ত্রীর স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং শিশু হাসপাতালের জন্য তহবিল তুলতে।
৩৬ ঘণ্টার কম সময়ে, জোন্স ওয়েলসের ক্লাইডিয়ান পর্বতশ্রেণির পথে দুবার হেঁটেছেন। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি হোপ হাউস চিলড্রেনস হসপিটালের জন্য সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৬৮ হাজার ডলার। বিবিসি, ওয়েলস অনলাইন ও দ্য টাইমস জানিয়েছে, পুরো অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে এই উদ্যোগ।
শুরু হয়েছিল একটি বাজি দিয়ে
গেল সেপ্টেম্বরে কোমরের অস্ত্রোপচারের পর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলেন ম্যাট। চিকিৎসক যখন তাকে ধীরে চলার পরামর্শ দিচ্ছিলেন, তার স্ত্রী ভিকি হেসে বলেছিলেন, “আপনি যেন একটা ইটের দেওয়ালের সঙ্গে কথা বলছেন!” সে সময় ভিকি মজা করে বলেন, ম্যাট একদিন নিশ্চয়ই ফ্রিজ কাঁধে নিয়ে হাইকিং করবে।
ম্যাট হেসে প্রতিশ্রুতি দেন—তিনি সুস্থ হলে ফ্রিজ কাঁধে দুইবার হাইকিং করবেন। সেই কথারই বাস্তব রূপ আজকের এই দুঃসাহসিক অভিযান।
স্ত্রীর স্মৃতিতে অঙ্গীকার
বড় দুঃখের বিষয়, গত বছরের ক্রিসমাসের ঠিক আগে ভিকি মারা যান। চার সন্তানের মা ভিকি ছিলেন পরিবারটির প্রাণ। তার মৃত্যুর পর সন্তানরাই বাবাকে কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। জানুয়ারিতে ম্যাট অঙ্গীকার করেন—ভিকিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রাখবেন।
জানুয়ারির পর থেকে শুরু হয় কঠোর প্রস্তুতি। নির্ধারিত হয় “ল্যাংলোলেন রাউন্ড”—৭০ মাইল দীর্ঘ ও ১৫,০০০ ফুট উচ্চতার একটি হাইকিং রুট, যেখানে পিঠে বহন করতে হবে একটি আসল ফ্রিজ!
ম্যাট জানান, “এটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন প্রশিক্ষণ ছিল, শারীরিক ও মানসিকভাবে। পাহাড় এখন আমার উপাসনালয় হয়ে গেছে।”
সাধারণ উদ্যোগ থেকে জনতার উন্মাদনায়
শুরুতে বিষয়টি ছিল শুধুই ব্যক্তিগত। কিন্তু পিঠে ফ্রিজ নিয়ে পাহাড়ে অনুশীলন করতে দেখে স্থানীয়রা ব্যাপকভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠে। “একসময় সবাই বলতে লাগল, ‘তুমি কি শুনেছ ওই লোকটার কথা যে পিঠে ফ্রিজ নিয়ে পাহাড়ে হাঁটছে?’ তখন আর এটা গোপন রাখা সম্ভব ছিল না,” বলেন ম্যাট।
চ্যালেঞ্জের দিন প্রথমেই খারাপ আবহাওয়ায় বিপর্যস্ত হলেও থামেননি তিনি। শরীর যন্ত্রণায় কাঁপছিল, ক্লান্তিতে অবসন্ন, তবু ভিকির কণ্ঠস্বর যেন তার চার সন্তানের কণ্ঠে শুনতে পাচ্ছিলেন—‘তুমি পারবে’।
ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ
ফান্ডরেইজিং পেজে ম্যাট লিখেছেন, “ভিকি ছিলেন ভেতরে-বাইরে সুন্দর। সবসময় অন্যদের আগে ভাবতেন, যাকে চিনতেন না তাকেও সাহায্য করতে পিছু হটতেন না। তিনি সত্যিকারের একজন অনুপ্রেরণা ছিলেন।”
এই হাইকিং ছিল কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, বরং ভালোবাসা, প্রতিশ্রুতি আর অদম্য মানসিক শক্তির এক অসাধারণ নিদর্শন ।
আলীম