ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদ উপহার বিতরণ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ও আহতদের পাশে মানবতার হাত

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ৪ জুন ২০২৫

ঈদ উপহার বিতরণ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ ও আহতদের পাশে মানবতার হাত

চলমান জীবনে ভয়াবহ থেকে মর্মবেদনা। কেউ কেউ জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্তের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ হারিয়েছেন প্রিয় সন্তান, কেউ বাবা, কেউ মাকে। কেউবা শারীরিকভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। শারীরিক ও মানসিক ক্ষত চিহ্নিতগুলো মুছে ফেলতে চাইলেও সেটিও সম্ভব নয়। স্মৃতির বেদনা কাঁদায়। কোন আনন্দঘন অনুষ্ঠানে এসেও চোখের পানি ফেলতে হয়। হৃদয়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে যেন ছাত্রজনতার সেই ভয়াল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোর কথা। প্রিয়জনকে চিরদিনের জন্য হারানোর বেদনা।

নীলফামারী জেলায় যাঁরা শহিদ ও আহত হয়েছিলেন, তাঁদের সম্মানে ও সহমর্মিতায় এবার পাশে দাঁড়িয়েছে নীলফামারীর শিল্প প্রতিষ্ঠান নীলসাগর গ্রুপ। বুধবার (৪ জুন) দুপুরে নীলফামারী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে ৩ জন নিহত ও ১৫৭ জন আহত ব্যক্তি ও পরিবারের হাতে ঈদ উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্টে যারা শহিদ ও আহত হয়েছেন, তাঁদের ত্যাগ আমাদের গর্ব ও প্রেরণার উৎস। নীলফামারীর শিল্পপ্রতিষ্ঠান নীলসাগর গ্রুপ তাদের নিজস্ব উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীর একটি বিশাল প্যাকেজ নিয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এই পরিবারগুলোর পাশে মানবিক দায়িত্ব থেকে, দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে ঈদ উপহার নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই আয়োজন ভয়াল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরিবারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।”


অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আহসান হাবীব লেলিনের প্রতিনিধি শাহ্ মুমিনুল ইসলাম চৌধুরী, নীলসাগর কনজ্যুমার প্রোডাক্টের ডোর টু ডোর প্রকল্পের ইনচার্জ আওরঙ্গজেব সুজন, ওয়ারিয়র্স অফ জুলাই নীলফামারী কমিটির আহ্বায়ক সাইমুন সাকিব ও ছাত্র প্রতিনিধি শ্রেষ্ঠ সরকার প্রমুখ।

শাহ্ মুমিনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “নিহত ও আহত শুধু কিছু সংখ্যা নয়। তারা আমাদের বিবেকের স্মারক। আমরা চাই, কেউ যেন ভুলে না যায় কাদের রক্তে লেখা হয়েছে এই ইতিহাস।”
এ সময় নিহত ও আহত পরিবারগুলোর পক্ষে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকে দুটি কথা বলতে গিয়ে অঝরে কেঁদেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত নিহত তিনজন জেলা সদরের গোড়গ্রামের নিহত রুবেলের (১৮) বাবা রফিকুল ইসলাম, জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার রণচণ্ডির নিহত নাঈম বাবুর (১৭) বাবা মোস্তফা, সৈয়দপুরের পাটোয়ারীপাড়ার নিহত সাজ্জাদের (৩৪) বাবা আলমগীর সহ ও ১৫৭ আহত ও আহতদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

সন্তানহারা স্বজনরা বলেছেন, “ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু এমন দিনে কেউ পাশে এসে দাঁড়ালে মনে হয়, সে শুধু আমার ছেলে নয়, জাতির সন্তান ছিল।” এই আয়োজন শুধু অনুদান বিতরণ নয়, ছিল একান্ত মানবিক দায়বদ্ধতার প্রকাশ। শোকের মাঝেও সম্মান থাকে, বেদনার মাঝেও দায়িত্ববোধ জাগে। সেটিই প্রমাণ করে দিল আজকের ঈদ উপহারের এই উদ্যোগ।

তারা এ জন্য নীলসাগর গ্রুপকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।নীলসাগর কনজ্যুমার প্রোডাক্টের ডোর টু ডোর প্রকল্পের ইনচার্জ আওরঙ্গজেব সুজন জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নীলফামারী জেলার গ্রেজেডভুক্ত নিহত ৩ জন ও আহত ১৫৭ জনকে এই ঈদ উপহার প্রদান করা হয়।

আফরোজা

×