ছবি: সংগৃহীত।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর দিকে যাওয়া রাস্তাগুলো এখন থেকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এসব এলাকায় ফিলিস্তিনিদের চলাচল নিষিদ্ধ।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (IDF) জানায়, সম্প্রতি গাজায় খাদ্য সংগ্রহের জন্য জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ২৭ জন নিহত হন। এই ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত GHF পরিচালিত একটি বিতরণকেন্দ্রের কাছে। গত তিন দিনে এ ধরণের এটি ছিল তৃতীয় ঘটনা।
IDF দাবি করে, “বিতরণ কেন্দ্রের কাছে কিছু ‘সন্দেহভাজন’ ব্যক্তি সৈন্যদের দিকে এগিয়ে আসছিলেন। প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়া হলেও তারা সরে না যাওয়ায় পরবর্তীতে আরো গুলি চালানো হয়।” তবে তারা স্পষ্ট করেনি এই ‘সন্দেহভাজনরা’ আসলে কারা ছিলেন।
GHF এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বুধবার তাদের বিতরণ কেন্দ্রগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে ‘সংগঠন ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য’। তারা বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় কার্যক্রম চালু করার কথা জানিয়েছে। সংগঠনটি আরও জানায়, তারা ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ২৭ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। রোববার একই এলাকায় আরেকটি ঘটনায় ৩০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।
এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক। তিনি বলেন, “ত্রাণ সংগ্রহের সময় বেসামরিক লোকদের ওপর এই প্রাণঘাতী হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ এবং এটি যুদ্ধাপরাধের শামিল।”
স্থানীয় বাসিন্দা ফাদি আবু মোহাম্মদ জানান, তাঁর ২২ বছর বয়সী আত্মীয় মোহাম্মদ আবু শামালাকে গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। “সে সামনের মাসে বিয়ে করার কথা ছিল,” বলেন তিনি। “ত্রাণ সংগ্রহে যাওয়া এখন এক প্রকার আত্মহত্যার শামিল, কিন্তু ক্ষুধায় মারা যাওয়ার চেয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন।”
উল্লেখ্য, মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল গাজায় সকল প্রকার সরবরাহ অবরোধ করে রেখেছে, অভিযোগ করে যে হামাস যোদ্ধারা ত্রাণ জব্দ করছে। যদিও মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
GHF ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা এর তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, এই নতুন ব্যবস্থায় গাজার ২৩ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয় এবং এটি ত্রাণকে নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা এবং ইন্টারফেইথ ইস্যুতে বিশিষ্ট ইভানজেলিক্যাল নেতা জনি মুরকে GHF-এর নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আগের প্রধান, সাবেক মার্কিন মেরিন জেক উডের স্থলাভিষিক্ত হলেন, যিনি GHF-এর স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পদত্যাগ করেন।
মুর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে লক্ষ্য করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত ফিলিস্তিনিদের খবর ‘সন্ত্রাসীদের ছড়ানো মিথ্যা’।
সূত্র: https://urli.info/-xFg
মিরাজ খান
