
ছবি: সংগৃহীত।
ঘুমের সময় নির্ভর করে আমাদের শরীরের "ক্রোনোটাইপ"-এর ওপর – কেউ হন ভোরের পাখি, কেউ আবার হন রাতজাগা পেঁচা। সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশেষ করে যারা উচ্চশিক্ষিত এবং রাতে জেগে থাকেন, তাঁদের মধ্যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।
নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব গ্রোনিনজেনের গবেষকরা ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী ২৩,৭৯৮ জন ব্যক্তির ঘুম ও মানসিক দক্ষতার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের অভ্যাসের সঙ্গে "Ruff Figural Fluency Test (RFFT)" নামে একটি মানসিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার ফলাফল তুলনা করা হয়, যেটি এক দশক ধরে চালানো হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে বেশি সময় জেগে থাকেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন, তাঁদের মধ্যে মানসিক দক্ষতা হ্রাসের হার বেশি। গবেষকরা লিখেছেন, "উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে প্রতিটি এক ঘণ্টা বাড়তি রাতজাগা মানসিক দক্ষতায় প্রতি দশকে ০.৮০ পয়েন্ট হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।"
তবে গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ঘুমের মান ও ধূমপানের অভ্যাস কিছুটা প্রভাব ফেলেছে এই মানসিক হ্রাসে – যথাক্রমে ১৩.৫২% এবং ১৮.৬৪%। যদিও এগুলো ছিল সামান্য প্রভাবক। উল্লেখযোগ্যভাবে, কম বা মধ্যশিক্ষিতদের মধ্যে এই ধরণের সম্পর্ক তেমন দেখা যায়নি।
গবেষকরা আরও বলেন, "শারীরিক পরিশ্রম, পূর্বের ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ – এসব ফ্যাক্টর এই সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারেনি।"
গবেষণাটি সরাসরি কারণ-ফলাফল দেখায়নি, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চিহ্নিত করেছে। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, যারা উচ্চশিক্ষিত, তাঁদের মাঝে মানসিক সক্ষমতা সাধারণত বেশি থাকে, তাই যখন হ্রাস পায়, সেটি তুলনামূলকভাবে বেশি চোখে পড়ে।
গবেষকরা ধারণা করছেন, উচ্চশিক্ষিত রাতজাগা ব্যক্তিরা চাকরির কারণে সকালে নিয়মিত উঠে পড়তে বাধ্য হন, ফলে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় না, যা ধীরে ধীরে মানসিক দক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে।
বিশ্বজুড়ে বয়স্ক জনগোষ্ঠী বাড়তে থাকায় ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতার মতো রোগের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে পৃথিবীতে আনুমানিক ৫৭ মিলিয়ন মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত, এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি Journal of Prevention of Alzheimer's Disease-এ প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা বলেন, “বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা এখন বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।”
সূত্র: https://urli.info/-xAW
মিরাজ খান