ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অনিদ্রার কারণ শুধু দুশ্চিন্তা নয়, কিছু অভ্যাসও দায়ী! 

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ৪ জুন ২০২৫

অনিদ্রার কারণ শুধু দুশ্চিন্তা নয়, কিছু অভ্যাসও দায়ী! 

ছবিঃ সংগৃহীত

রাতে ঘুম আসছে না? বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছেন, কিন্তু চোখে ঘুম নেই? এমন পরিস্থিতি অনেকেই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে অনুভব করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া এখন একটি সাধারণ মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা।

অনিদ্রার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে – বয়সের প্রভাব, হরমোন পরিবর্তন, বারবার প্রস্রাব, মানসিক চাপ, রাত্রিকালীন কর্মজীবন ইত্যাদি। দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

যা করা উচিত
১. ঘুম না এলে উঠে পড়ুন:
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কলিন ইসপি বলেন, ঘুম না এলে বিছানায় জোর করে পড়ে থাকা উচিত নয়। বরং উঠে হালকা কিছু করুন, যেমন বই পড়া, তারপর আবার বিছানায় ফিরে যান।

২. ঘুমের নির্দিষ্ট রুটিন গড়ে তুলুন:
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস মস্তিষ্ককে সিগন্যাল দেয় – কখন ঘুমাতে হবে। বিছানার বাইরে কাজ করা বা সোফায় ঘুমিয়ে পড়া ঠিক নয়।

৩. চিন্তা থামানোর চেষ্টা করুন:
দুশ্চিন্তা ঘুমের বড় শত্রু। ঘুম না আসলে “ঘুমাতে হবে” এই চাপ কমান। বরং মেনে নিন যে এখন ঘুম আসছে না, তবে পরে আসবেই।

যা করা উচিত নয়
১. ঘুমানোর জন্য জোর করা:
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কেউ ঘুমানোর চেষ্টা যত বেশি করবেন, ঘুম ততই দূরে সরে যেতে পারে। জোর করে ঘুমানো সম্ভব নয়।

২. বিছানায় বসে কাজ করা:
বিছানাকে শুধুমাত্র ঘুমের জন্য ব্যবহার করুন। এখানে ফোন দেখা, ল্যাপটপে কাজ করা – এগুলো পরিহার করুন।

৩. ঘুমের আগে স্ক্রিনে উত্তেজনাকর কিছু দেখা:
ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল বা টিভি স্ক্রিনে ভয়ংকর বা উত্তেজনাকর কনটেন্ট দেখলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে যায়, ফলে ঘুম বিঘ্নিত হয়।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
সপ্তাহে ৩ রাত ঘুমে সমস্যা হচ্ছে, সমস্যা চলছে ৩ মাসের বেশি, দিনের কাজে প্রভাব পড়ছে এমন হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

অনিদ্রার চিকিৎসায় ঘুমের ওষুধের পরিবর্তে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপির (CBT) – যা চিন্তা ও অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘুম ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। গবেষণা বলছে, CBT ৭০-৮০% ক্ষেত্রে কার্যকর।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব
মেনোপজ: নারীদের হরমোন পরিবর্তন ও হট ফ্ল্যাশ ঘুম বিঘ্ন করতে পারে।

এলকোহল: ঘুমের স্বাভাবিক প্যাটার্ন নষ্ট করে, প্রস্রাবের চাপ বাড়ায়।

নাইট শিফট: যারা রাতের কাজ করেন, তারা যেন ডে-অফে ঘুমের ঘাটতি পূরণ করেন। 

ঘুম কোনো বাটনের চাপ নয় যে সঙ্গে সঙ্গে চালু হবে। এটি ধীরে ধীরে আসে – সময় ও মানসিক প্রশান্তির প্রয়োজন হয়। নিয়মিত রুটিন, চিন্তামুক্ত মন এবং একটু ধৈর্যই অনিদ্রার প্রধান ওষুধ।

ঘুম ঠিক থাকলে, জীবন ঠিক থাকে। এটা আপনার প্রাত্যহিক সুস্থ জীবনের অপরিহার্য অংশ।

নোভা

×