ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরু

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত, বাস্তবায়ন সহজ হবে না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৩ জুন ২০২৫

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত, বাস্তবায়ন সহজ হবে না

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত এবং এতে গুণগত কিংবা কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সোমবার বিকেলে বনানীর হোটেল সারিনায় দলের পক্ষে প্রাথমিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করে বলেন, এ বাজেট বাস্তবায়ন সহজ হবে না। বুধবার বেলা ১১টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের পক্ষ থেকে বাজেট সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে তিনি জানান। 
আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মৌলিক জায়গায় গলদ রয়ে গেছে। এতে রাজস্ব আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি নেই। রাজস্ব আয়ের ওপর ভিত্তি করে বাজেট করা উচিত ছিল। ব্যাংক থেকে সরকার যদি লোন নেয়, তখন প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ হয় না। রাজস্ব আয়ের পুরোটাই পরিচালনা ব্যয়ে চলে যাবে।
বাজেটের মৌলিক দিক নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, এই বাজেটে মৌলিক জায়গায় দূরত্ব রয়ে গেছে। তিনি বলেন, গুণগত দিক থেকে আমরা এ বাজেটে কোনো পরিবর্তন দেখি না। গুণগত দিক থেকে বাজেটে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা রয়ে গেছে। কাঠামোগত দিক থেকেও আগেরটাই রয়ে গেছে।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন সহজ হবে না বলে মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, এর আকার ছোট হওয়া উচিত ছিল। পূর্বের সরকারের দেওয়া বাজেটের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আগে যেভাবে বাজেট চলে আসছিল তার থেকে সংখ্যার সামান্য কিছু তারতম্য হয়েছে। কিন্তু বাজেটের মূল যে প্রিন্সিপাল ওইখানে কিন্তু আমরা আগের মতোই রয়েই গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বলতে চাই না। তবে অনেকটা আগের মতোই, আগের সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে খুব একটা বের হতে পারেনি। 
আমীর খসরু বলেন, রাজস্ব আয়কে বৃদ্ধি করে বাজেট করা উচিত। এতে বেসরকারি খাতের মানি ফ্লোটা থাকল, বিনিয়োগ থাকল, সুদের হারটা কমে এলো, বিদেশ থেকে ঋণ কমে এলো। সে জায়গা থেকে খুব একটা সরে আসতে পারেনি। আমি মনে করি এ বাজেটের মৌলিক জায়গায় গলদ রয়ে গেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথমবারের মতো দেওয়া বাজেট নিয়ে প্রত্যাশা খুব কম বলে মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আগের সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে খুব একটা বের হতে পারেনি। বাজেটের সাইজ ছোট হওয়া উচিত ছিল। গুণগত দিক দিয়ে এবারের বাজেটে পরিবর্তন নেই, সংখ্যার সামান্য পরিবর্তন রয়েছে। তাই সরকারের জন্য এই বাজেট বাস্তবায়ন করা খুব একটা সহজ হবে না।
আমীর খসরু বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাজেট পেশের বিষয়ে একটা সীমাবদ্ধতা, সময়ের ব্যাপার আছে। একটি নির্বাচিত সরকারের বাজেটের প্রতি এপ্রোচ, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার বিষয় থাকে সেটা বুঝতে হবে। এ জন্য আমরা মনে করি এবং সার্বিকভাবে যেটা অনুভব করি সেটা হলো- বাজেটের সাইজটা বাড়াতে বাড়াতে আগের সরকার যে জায়গায় নিয়ে গেছে সেটার সঙ্গে বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। 
আমীর খসরু বলেন, রাজস্ব আয়ের পুরোটা পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে যখন ব্যয় হয়, তখন কিন্তু মনে হবে আপনি উন্নয়ন বাজেট দেশের ভেতর থেকে দেশের বাইরে থেকে চালাচ্ছেন। তার ফলে যে সমস্যা হয় তা হলো- সরকার যখন দেশের ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেয় তখন ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। সেটা দেশের মানুষকে দিতে হয় বছরের পর বছর। সেই ঋণের সুদের কারণে উন্নয়ন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমীর খসরু বলেন, আবার দেশের ভেতর থেকে ঋণ নেওয়া হলে বেশি ক্ষতি। এটার সুদ দিতে গিয়ে পুরো বাজেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সরকারকে অনেক বেশি টাকা ঋণ নেওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণের রেট বেড়ে যায়। দেশের ভেতর থেকে যখন সরকার বেশি ঋণ নেয় তখন ব্যক্তি ঋণ কমে যায়। এর ফলে বিনিয়োগ হয় না। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। মানুষের আয় বৃদ্ধি পায় না।

×