ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রকাশ্যে এলো যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েন এর কারন

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ৪ জুন ২০২৫

প্রকাশ্যে এলো যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েন এর কারন

ছবি:সংগৃহীত

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের দৃশ্যমান শীতলতা। এক সময়ের উষ্ণ মিত্রতা আজ যেন সন্দেহ আর দূরত্বে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এ সম্পর্কে ভাটার টান স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

 

 

প্রথম দফার প্রেসিডেন্সিতে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও প্রশংসিত সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন ট্রাম্প। “হাউডি মোদী” বা “নমস্তে ট্রাম্প” আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব যেন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন অতীত। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে নিয়ে যে মনোভাব প্রকাশ করেছে, তা থেকেই পরিষ্কার যে যুক্তরাষ্ট্র এখন আর আগের মতো দিল্লিকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

এই অবস্থার পেছনের কারণগুলো অবশেষে প্রকাশ্যে এনেছেন মার্কিন কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লাটনিক। ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদারীত্ব ফোরামের অষ্টম সভায় তিনি খোলাখুলি বলেন, ভারত যেভাবে রাশিয়ার প্রতি নির্ভরতা বাড়াচ্ছে, তা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

 

 

লাটনিকের বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের সামরিক খাতে রাশিয়ার উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একপ্রকার আস্থাভঙ্গ। তিনি বলেন, “ভারত সাধারণত রাশিয়ার কাছ থেকেই অস্ত্র কিনে, এটা আমাদের বন্ধুত্বের সঙ্গে যায় না।” যুক্তরাষ্ট্র চায়, ভারত তার প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত চাহিদা মেটাতে ওয়াশিংটনের দিকে ফিরে তাকাক। কিন্তু ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো যেন ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।

এছাড়াও ভারত যে ব্রিকস (BRICS) জোটে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে এবং ডলারের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করতে চাচ্ছে, তা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। লাটনিক বলেন, “ব্রিকস বলছে, ডলারের আধিপত্য ভাঙো। আর ভারত সেই উদ্যোগকে সমর্থন করছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশ্বাস আর বন্ধুত্ব আশা করা কঠিন।” ট্রাম্প নিজেও ব্রিকসের এমন কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করেছেন বলেও জানান তিনি।

 

 

যদিও এমন পরিস্থিতির মাঝেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্বেগগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা এখনো রয়ে গেছে। লাটনিক বলেন, “সমস্যাগুলো নিয়ে মুখোমুখি ও স্পষ্ট আলোচনা হলেই সম্পর্ক জোরালো করা সম্ভব।” তিনি বাণিজ্য খাতে নতুন চুক্তির সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে, ভারতও স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, তার জাতীয় স্বার্থ যেখানে থাকে, সেখানেই সে জোর দেবে। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা, সেই ব্যবস্থার সফল ব্যবহার এবং ভবিষ্যতে আরও ইউনিট কেনার পরিকল্পনা এ কথার প্রমাণ। এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র ব্রাহ্মসকে আধুনিকীকরণেও রাশিয়ার কারিগরি সহায়তা চায় দিল্লি। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, সামরিক খাতে ভারত-রাশিয়ার সম্পর্ক আরও গভীর হতে চলেছে।

এই পরিস্থিতিতে দিল্লি-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক কোন পথে এগোয়, তা আগামী দিনের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ, ভূরাজনৈতিক সমীকরণ এবং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য, সব কিছু মিলিয়ে এখন শুধু সময়ই বলে দিতে পারে, দুই দেশের এই দূরত্ব চিরস্থায়ী কিনা।

আঁখি

×