
ছবি: সংগৃহীত
সময় রাত ১টা। ঈদের আগে রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে যেন থমকে গেছে স্বপ্নের ঘড়ি। সন্ধ্যা ৯টার টিকিট হাতে নিয়ে তখনও দাঁড়িয়ে আছে হাজারো মানুষ। কারও কোলে শিশু ঘুমিয়ে পড়েছে, কেউ পলিথিন পেতে বসে আছেন ফুটপাতে। কেউ কাউন্টারের সামনে বারবার গিয়ে জানতে চাইছেন—‘বাস কখন আসবে?’
ঈদের মাত্র আর একদিন বাকি। প্রিয়জনদের কাছে যাওয়ার তাগিদে মানুষ ছুটে এসেছেন বাসস্ট্যান্ডে। কিন্তু টিকিট না পাওয়ার যন্ত্রণা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা আর অনিশ্চিত যাত্রা সময়ের চাপ পরিণত হয়েছে এক অসহনীয় দুঃস্বপ্নে।
একাধিক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাত ৮টার টিকিট, এখন বাজে ১টা। কোনো তথ্য নাই, কবে আসবে জানে না কেউ।’ কেউ কেউ ভীষণ ক্লান্ত হয়ে ফুটপাতেই ঘুমিয়ে পড়েছেন।
রাজশাহী যেতে অপেক্ষমাণ যাত্রী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি, এখন রাত ১টা বাজে। বাসের কোনো ঠিক নাই। কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে, আরেক ঘণ্টা লাগবে। জানি না আদৌ বাস পাবো কিনা।’
বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে থাকা এক বাবা বললেন, ‘বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়েছে কোলে। বলছে, বাবা কখন বাড়ি যাবো? আমি উত্তর দিতে পারছি না।’
ওয়াশরুমে লাইন ধরে মানুষ দাঁড়িয়ে, অনেকেই দীর্ঘসময় ধরে সুযোগ পাচ্ছেন না। একটি জনপ্রিয় বাস কোম্পানির কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘অতিরিক্ত যাত্রী, যানজট আর রাস্তায় বাস আটকে থাকায় নির্দিষ্ট সময়ে বাস ঢাকায় পৌঁছাতে পারছে না। ফলে ডিপার্চার সময়ও পিছিয়ে যাচ্ছে।’
প্রতিবছর একই চিত্র, একই দুর্ভোগ, অথচ সুরাহা নেই। দেশের অর্থনীতি এগোচ্ছে, প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, কিন্তু ঈদের সময় একটি পরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থার স্বপ্ন আজও অধরা। প্রশ্ন থেকেই যায়—এই দুর্ভোগ কি নিয়তির, নাকি অব্যবস্থাপনার?
রুমান হাসান তামিম/রাকিব