ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য ১৮০ দিনের রোডম্যাপ দিল বিএনপি

প্রকাশিত: ১৫:১১, ৪ জুন ২০২৫

ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য ১৮০ দিনের রোডম্যাপ দিল বিএনপি

আজ বুধবার দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বাজেট (২০২৫–২৬) বিষয়ক  বক্তব্য রাখেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ।  সেখানে তিনি ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য ১৮০ দিনের রোডম্যাপ  ঘোষণা করেন। 

দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের আগেই সরকার গঠনের পর প্রথম ১৮০ দিনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলসমূহ এমন কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে থাকে। বাংলাদেশেও সে ধরনের একটি সংস্কৃতি প্রবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি।

এই ৬ মাসের পরিকল্পনার ভিত্তিতে একটি অ্যাকশন-ওরিয়েন্টেড রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে। বিএনপি জানিয়েছে, নতুন সরকার গঠনের পর তারা যে সুনির্দিষ্ট খাতগুলোতে কাজ করবে, তা আগেভাগেই স্পষ্টভাবে জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।

বিএনপির ১৮০ দিনের পরিকল্পনা

শিক্ষা ব্যবস্থা:

  • প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অর্থনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা এবং তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

  • দেশের ও প্রবাসী শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। মূল লক্ষ্য হবে—প্রাথমিক পর্যায় থেকে বহু ভাষা, ক্রীড়া, কৃষ্টি এবং ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নয়নসহ বাস্তবানুগ বিষয়সমূহ শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা।

  • সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্লাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক্স, ডেন্টাল হাইজেনিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ইত্যাদির স্বল্পমেয়াদি ‘ট্রেড কোর্স’ চালু করা হবে।

  • শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবমুখী করতে এপ্রেন্টিসশিপ, ইন্টার্নশিপ এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় শহরগুলোতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক স্থাপন করে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। ফলে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করবে এবং কর্মজীবনে ব্যাপক হারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

  • জেলা পর্যায়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেটিভ বিজনেস আইডিয়া বাণিজ্যিকীকরণ করতে প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় সিড ফান্ডিং বা ইনোভেশন গ্র্যান্ট প্রদান করা হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—ক্যাম্পাস থেকে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা তৈরি করা, যারা নতুন এবং সৃজনশীল ব্যবসায়িক ধারণা বাস্তবায়ন করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন।

স্বাস্থ্য সেবা:

  • রোগ প্রতিরোধকে প্রাধান্য দিয়ে টিকাদান, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং সচেতনতা তৈরির একাধিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

  • স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, স্যানিটেশন এবং পুষ্টির উপর জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে।

  • চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য স্পেশালাইজড ট্রেনিং স্কিম শুরু করা হবে। তাঁরা রোগের দ্রুত সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধে দক্ষ হয়ে উঠবেন।

  • নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য আধুনিক পরিশোধন ব্যবস্থা ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য পর্যায়ক্রমে দেশব্যাপী রিজার্ভার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। জনগণ নিরাপদ পানি পাবে।

নারীর ক্ষমতায়ন:

  • প্রায় প্রান্তিক চার কোটি পরিবারের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ লাখ দরিদ্র গ্রামীণ পরিবারের জন্য ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হবে। এই কার্ড মূলত পরিবারের নারী প্রধানের নামে ইস্যু করা হবে। তাঁদের প্রতিমাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহায়তা অথবা প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে এবং পরিবারগুলো ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

  • নারীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় ধর্ষক-নিপীড়কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

  • নারীদের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ডেডিকেটেড সাপোর্ট সেল প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেখানে যেকোনো লাঞ্ছিত নারীর জন্য প্রয়োজন মোতাবেক নারী ডাক্তার, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সর্বাঙ্গীণ সহায়তা নিশ্চিত করবেন।

  • নারীদের স্বনির্ভরতা বাড়াতে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন ও মার্কেটিং সাপোর্ট প্রদান করা হবে।

শহীদদের স্বীকৃতি:

  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এবং ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদের তালিকা প্রস্তুত করে নিজ নিজ এলাকায় তাঁদের নামে সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে। শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

  • গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যেসব গণতন্ত্রকামী ব্যক্তি পঙ্গু হয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন, তাঁদেরকেও স্বীকৃতি ও চাকরির সহায়তা প্রদান করা হবে।

কৃষি খাত ও গ্রামীণ উন্নয়ন:

  • কৃষকের নামে জমির পরিমাণ ও খতিয়ানসহ প্রয়োজনীয় তথ্যসংবলিত ‘ফার্মার্স কার্ড’ চালু করা হবে। বর্গাচাষি ও ক্ষুদ্র কৃষকের জন্য কমপক্ষে একটি মৌসুমি ফসলের জন্য সম্পূর্ণ উৎপাদন খরচ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। এর ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষিজমি অনাবাদি থাকবে না। ভূমিহীনদের জন্যও কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

  • কৃষকের কাছ থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে রাষ্ট্র ন্যায্যমূল্যের ভিত্তিতে সরাসরি উৎপাদিত পণ্য ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করবে এবং দেশব্যাপী কোল্ড স্টোরেজ তৈরির কাজ শুরু হবে।

  • কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, মানোন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে কৃষি খাতকে রপ্তানিমুখীন গড়ে তোলা হবে।

  • এলাকাভিত্তিক ডাটাবেস তৈরি করা হবে। কৃষকের জমি ও উৎপাদিত ফসলের পরিমাণের তথ্য-উপাত্ত নির্ণয় করে টার্গেটেড পলিসি সাপোর্ট দেওয়া হবে।

  • বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য চাঁদাবাজি, মধ্যস্বত্বভোগী ও ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

  • দেশব্যাপী খাল খননের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করা হবে। বন্যা ও খরা থেকে কৃষকদের সুরক্ষিত রাখার কর্মসূচি নেওয়া হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো হবে।

  • ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসার, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও জনশক্তি রপ্তানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

শিল্প খাত:

  • ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির রোডম্যাপে FDI-GDP অনুপাত ০.৪৫% থেকে ২.৫%-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।

  • বিএনপি ২০৩৪ সালের মধ্যে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ১ ট্রিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করতে চায়।

  • জনগণের ঘাড় থেকে বাড়তি ট্যাক্সের বোঝা হ্রাস করা হবে।

  • শিল্প খাতের বিকাশে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে। যেসব বিনিয়োগে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সেই ধরনের প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

  • বিনিয়োগ সহজ করতে, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ব্যাংকিং সাপোর্ট নিশ্চিতের লক্ষ্যে “ওয়ান স্টপ সার্ভিস” বাস্তবায়ন করা হবে।

  • নতুন শিল্প সৃষ্টির জন্য কৃষি, মৎস্য ও অন্যান্য উৎপাদনমুখী খাতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

  • পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ আওয়ামী দুঃশাসনে বন্ধ হয়ে যাওয়া মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পসমূহের তালিকা প্রস্তুত করে সেগুলো পুনরায় চালুর দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাত:

  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়নের জন্য দেশব্যাপী প্রোডাকশন ফ্যাসিলিটি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনিং প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হবে। তাঁরা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সরবরাহকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পণ্য বিশ্বব্যাপী বিক্রি করতে সক্ষম হবেন।

  • বাংলাদেশে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব ইত্যাদি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের অফিস খোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

  • ফ্রিল্যান্সার তরুণ-যুবকদের সুবিধার্থে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশে পেপাল এবং অন্যান্য পেমেন্ট মেথডসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম শুরু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

  • ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এবং ডেটা প্রসেসিংকে উৎসাহিত করার জন্য জেলা পর্যায়ে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রম নেওয়া হবে।

প্রবাসী কল্যাণ:

  • প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিমানবন্দরসহ সব ক্ষেত্রে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে।

  • প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে উৎসাহ, সুযোগ ও প্রণোদনা দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে বিদেশের বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোকে গতিশীল করা হবে। প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফেয়ার’ আয়োজনের মাধ্যমে বিনিয়োগ নীতিমালা, বিশেষ সুবিধাসমূহ ও অর্থনৈতিক পরিবেশ তুলে ধরা হবে।

  • যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত জনশক্তি রপ্তানি হয়, সেসব দেশের কর্মসংস্থান চাহিদা বিশ্লেষণ করে স্কিল ও ক্যাপাবিলিটির প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে ভোকেশনাল ও টেকনিক্যাল শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

নগর ব্যবস্থাপনা:

  • নারীদের সার্বক্ষণিক নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্রাথমিকভাবে ঢাকার বিভিন্ন রুটে ‘শুধুমাত্র নারী যাত্রী’ বাস চালু করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে সেখানে ড্রাইভার ও সহকারী হিসেবেও নারীরা থাকবেন।

  • ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। ট্রাফিক লাইটে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের পাশাপাশি ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, লেন-ভিত্তিক যানবাহন পরিকল্পনা ইত্যাদি উদ্ভাবনী সমাধান বাস্তবায়ন করা হবে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে নগরীতে যানজট কমানো হবে।

পরিবেশ ব্যবস্থাপনা:

  • ৫ বছরে ২৫ থেকে ৩০ কোটি বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি ইতিমধ্যে ঘোষিত হয়েছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও বৃক্ষমেলা আয়োজন করা হবে।

  • দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন এবং মহানগরের প্রতিটি থানায় উন্মুক্ত মাঠের সংখ্যা বাড়িয়ে স্থানীয় পর্যায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা ও উন্নতি নিশ্চিত করতে গাছপালা রোপণ, সবুজ বেষ্টনী তৈরি এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন’ বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

  • পলিথিন নিষিদ্ধ করে পাটজাত ব্যাগকে উৎসাহিত করা হবে। সব ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি’ ও ‘সাস্টেইনেবল প্রোডাক্ট’কে উৎসাহিত করা হবে।

আইন-শৃঙ্খলা:

  • ধর্ষণ, ছিনতাই, রাহাজানি, চুরি–সব ধরনের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। যেকোনো মূল্যে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

  • মাঠপর্যায়ে পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির জন্য ট্রেনিং, কনসালটেশন, মোটিভেশন এবং মনিটরিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের পেশাদারিত্ব, দক্ষতা এবং সেবামূলক মনোভাব বৃদ্ধি পাবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

ঋণ ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি

রাজস্ব চাপ, মুদ্রানীতি কঠোরীকরণ এবং আর্থিক ভঙ্গুরতার কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি বিদ্যমান। দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার স্বার্থে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজস্ব কৌশল প্রণয়ন, কাঠামোগত সংস্কার এবং প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতা-ভিত্তিক টেকসই উন্নয়নের পথে গ্রহণ করা হবে। বিএনপি ঋণের বোঝা কমাতে ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বৃদ্ধির কৌশলও নির্ধারণ করেছে। সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলঃ

ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল: সরকারি ঋণের গঠনগত উন্নয়ন ও ঋণ সংগ্রহের ব্যয় হ্রাস বিষয়ক ‘মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল (এমটিডিএস)’ প্রণয়ন করবে। সুদ পরিশোধের বোঝা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রোলওভার ঝুঁকি কমাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করবে। রাজস্ব ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে সরকারি ঋণ সংগ্রহকে অনুকূলিত করে ব্যক্তিখাতের ঋণ প্রবাহ সংকোচন বন্ধ করবে।

ব্যয় অগ্রাধিকরণ ও দক্ষতাবৃদ্ধির কৌশল: অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধ ও পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ভর্তুকি যুক্তিসঙ্গতকরণ করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কাঠামো গঠন, নতুন প্রকল্পের জন্য কঠোর ব্যয়-লাভ বিশ্লেষণ নির্দেশিকা এবং কর্মক্ষমতা-ভিত্তিক বাজেটিং পদ্ধতি প্রণয়ন করা হবে।

স্বল্পমেয়াদি ঋণের ওপর নির্ভরতা হ্রাসঃ স্বল্পমেয়াদি ঋণের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে সরকারের দায়ের পরিমাণ কমানো হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারি খাতের ঋণগ্রহণের হার কমিয়ে ব্যক্তিখাতের ঋণ প্রবাহ বাড়িয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি সঞ্চার করা হবে।

ঋণ-উন্নয়ন-বিনিময় কৌশলঃ ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা করে বৈদেশিক ঋণকে স্থানীয় বিনিয়োগে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। রূপান্তরিত অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন বৃদ্ধি, শিক্ষা অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং স্বাস্থ্য কাঠামো তৈরির মতো জনহিতকর কাজে ব্যবহার করা হবে। এতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে সৃষ্ট বৈদেশিক সাহায্যের হ্রাসজনিত ফারাকও কমাবে। একদিকে বৈদেশিক ঋণের বোঝা কমবে, অন্যদিকে সম্পদ সরাসরি টেকসই ও সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি তৈরির চালিকাশক্তিতে নিয়োজিত হবে।

অবৈধ ঋণ পর্যালোচনা ও বাতিলকরণ প্রক্রিয়াঃ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকালে গৃহীত সকল ঋণ পর্যালোচনা ও বাতিলকরণ প্রক্রিয়ার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের অনুরোধ জানানো হবে।

রাজস্ব ব্যবস্থার যুগোপযোগীকরণ: এনবিআরকে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হবে। নীতি প্রণয়নের কাজ করতে বর্তমানের শুল্ক ও বাণিজ্য কমিশনকে আওতাভুক্ত করে ‘বাংলাদেশ কর ও শুল্ক কমিশন’ নামে একটি পৃথক প্রতিষ্ঠান গড়া হবে।

কর কোড আধুনিকায়নঃ প্রত্যক্ষ করকে অগ্রাধিকার দিয়ে ‘কর কোড’ আধুনিকায়ন করা হবে। সহজীকরণ এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে অফিস স্থাপন করে করের আওতা বাড়ানো হবে।

প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা: প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা তথা বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংক লেনদেন, ভূমি রেকর্ড ইত্যাদি একীভূত করে কর সনাক্তকরণ ড্যাশবোর্ড চালু, বন্ডেড গুদামের জন্য ব্লকচেইন-ভিত্তিক ট্র্যাকিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ঝুঁকি মূল্যায়ন জালিয়াতি রোধে সহায়ক হবে।

সবুজ কর কাঠামো: উচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পের ওপর কার্বন কর আরোপ করা হবে। উক্ত রাজস্ব জলবায়ু অভিযোজন তহবিলে যাবে।

কার্যকর ট্রান্সফার প্রাইসিং আইনঃ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মাস্টার ও স্থানীয় নথি জমা এবং দেশওয়ারি রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করা হবে। মুনাফা স্থানান্তরের ওপর কঠোর জরিমানা আরোপ করা হবে।


বাজেট প্রক্রিয়ার সংস্কার

বাজেট অনুমোদনের জন্য প্রচলিত সাংবিধানিক পদ্ধতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। জবাবদিহিতা এবং বাংলাদেশে সংসদীয় তদারকি শক্তিশালী করার জন্য মৌলিক সাংবিধানিক ও পদ্ধতিগত সংস্কারও করা হবে। সংসদীয় কমিটিকে শক্তিশালী করা, স্বচ্ছতা এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ, নির্বাচনপূর্ব কেয়ারটেকার সরকারের জন্য পরিষ্কার নির্দেশিকাসহ বিস্তৃত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সানজানা

×