ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এর চেয়ে ভালো বাজেট আশা করা যায় না ॥ আবু আহমেদ

নাজমুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০০:১৪, ৩ জুন ২০২৫

এর চেয়ে ভালো বাজেট আশা করা যায় না ॥ আবু আহমেদ

আবু আহমেদ

বর্তমান সময়ে সেরা বাজেট হয়েছে। এর চেয়ে ভালো বাজেট আশা করা যায় না। ঘাটতি বাজেট ৩.৬ শতাংশ। আমার মতে রাজস্ব বাজেটের আকার অনেক বড় হয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। এডিপির তুলনায় প্রায় আড়াই গুণের বেশি। আমাদের সময় রাজস্ব বাজেট জিডিপির কাছাকছি ছিল। রাজস্ব বাজেট নিয়ে আমাদের আগে থেকেই চিন্তা করা উচিত ছিলো। শিক্ষা খাতে ঢালাওভাবে জাতীয়করণ করলেও শিক্ষার কিন্তু মান বৃদ্ধি হচ্ছে না।
সোমবার বিকেলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট প্রস্তাব পরবর্তী সময়ে জনকন্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ এসব কথা বলেন। 
আবু আহমেদ বলেন, আমাদের সংস্কারের দিকে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পক্ষে থাকে। দেশের মধ্যে নিজেরা নিজেরা যদি যুদ্ধের মত অবস্থায় থাকে তাহলে তো ভালো কিছু আশা করা যায় না। আগের সরকার নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে। মাফিয়া গ্রুপ তৈরি করেছে। এখনো যদি আমরা গণতন্ত্রের নামে ঝগড়া করি তাহলে সামনে আগানো অসম্ভব। এ ছাড়া সর্বগ্রহণ যোগ্য নির্বাচন হলে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। তখন বিদেশিরা আমাদের ওপর আস্থা রাখবে।   
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ পোর্ট, এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রাইভেট করে দিয়েছে যে কারণে তাদের আয় বাড়ছে কিন্তু আমাদের আরও কমছে। আমি মনে করি থার্ট টার্মিনাল জাপানি কোম্পানিকে দেওয়া উচিত। চট্টগ্রাম পোর্টও প্রাইভেট করা উচিত।
বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসনের মাধ্যমে এ খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এতো টাকা পাচার হয়েছে তা অতুলনীয়। ব্যাংকগুলো লুটকরার কারণেই কিন্তু আর্থিক থাতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে যে কারণে পুঁজিবাজারেও প্রভাব পড়েছে।
আবু আহমেদ বলেন, আর্থিক খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে গেলেও সেগুলো বারবার পুনঃতফসিলিকরণের মাধ্যমে আসল অবস্থা গোপন রাখা হয়েছে। তবে বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং পদ্ধতি চালু করেছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২০ শতাংশে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে শেষ করে যারা মাফিয়া গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এই সরকারের সময় তো আর এই সুযোগ নেই। অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছে অনেক আগেই। তাদের বিচার করা এখন অনেক কঠিন হচ্ছে। তবে বিচারের আওতায় আনতে সর্বোচ্চ চেষ্ট করা হচ্ছে।  
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন অপশাসনের মাধ্যমে এ খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে, ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘদিনের কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট, দেউলিয়াত্ত বা অস্তিত্বের জন্য হুমকি এমন সব ঝুঁকির সময়োপযোগী সমাধান এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে ব্যাংক রেজুৃল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
এবারের বাজেটে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যকার করপোরেট করহারের ব্যবধান বৃদ্ধি, ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর ধার্য কর কমানো এবং শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট করহার হ্রাস। এসব প্রণোদনার সুবিধাভোগী শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সরাসরি বিনিয়োগকারীরা এর কোনো সুবিধা পাবেন না। যদিও বাজেটের আগে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ আয় থেকে শুরু করে মূলধনী মুনাফার ওপর থেকে কর প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে।
বাজেট প্রস্তাবে শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শর্তসাপেক্ষে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ করপোরেট কর ছাড় পাবেন। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে এ সুবিধা পাওয়া যাবে। এ জন্য তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা জানান, শর্তসাপেক্ষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার হবে ২০ শতাংশ। আর তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহার হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে শর্তসাপেক্ষে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর করহার আরও আড়াই শতাংশ কম হবে।

এই শর্তের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত করবর্ষে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সব আয় ও প্রাপ্তি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে। পাশাপাশি ৫ লাখ টাকার বেশি লেনদেন ও বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার বেশি সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের শর্ত পূরণ করলে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন করহারের ব্যবধান কমে ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
এ ছাড়া ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেনের ওপর থেকে উৎসে কর কিছুটা কমানো হয়েছে। বর্তমানে প্রতি ১০০ টাকার লেনদেনে ৫ পয়সা কর আদায় করা হয়। আগামী বাজেটে এই কর কমিয়ে ৩ পয়সায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট কর ১০ শতাংশ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সাড়ে ৩৭ শতাংশ হারে করপোরেট কর দেয়। আগামী অর্থবছরে তা কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

×