ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

খাল বন্ধ, পানি আটকে বীজতলা পচে যাচ্ছে মতলবে

সুমন আহমেদ, মতলব, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ০০:১৮, ৩ জুন ২০২৫

খাল বন্ধ, পানি আটকে বীজতলা পচে যাচ্ছে মতলবে

ছবি: জনকণ্ঠ

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ ও অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আউশ ধানের বীজতলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষকদের দাবি, প্রকৃত ক্ষতির পেছনে দায়ী দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের অব্যবস্থাপনায় পড়া খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা।

মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় থাকলেও খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনার শিকার। অধিকাংশ খাল এখন কচুরিপানা, পলি ও ময়লায় বন্ধ। নিয়মিত খাল পরিষ্কার না করায় সেচ সুবিধার বদলে তা এখন বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জলাবদ্ধতা ও খাল ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা এখন শুধু প্রকৌশলগত সমস্যা নয়, বরং তা কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আউশ মৌসুমে এই ক্ষতির প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৮ হেক্টর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি হেক্টরের বীজ দিয়ে ২০ হেক্টর জমিতে চাষ সম্ভব। অর্থাৎ প্রায় ১৬০ হেক্টর জমির ধান উৎপাদন হুমকির মুখে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলাকান্দা ইউনিয়নের হানিরপাড় বিল, টরকী, ঠাকুরচর, নন্দলাপুর, তাতুয়া, ঝিনাইয়া বিলসহ বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে। খালগুলোর পানিপ্রবাহ না থাকায় কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই জমে থাকা পানি নামছে না, ফলে বীজতলা পচে যাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলছেন, “বীজতলা ডুবে যাওয়ায় আমরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি। এখন নতুন করে বীজতলা তৈরি করতেও সময় ও খরচ লাগবে। সেক্ষেত্রে আউশ মৌসুমে ধান চাষ করা অনেকটাই কঠিন হয়ে যাবে।”

মতলব উত্তর উপজেলার টরকী এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের বীজতলা একরকম শেষ। এখন যদি সরকারি সহায়তা না পাই, তাহলে অনেকেই ধান চাষে আগ্রহ হারাবে।”
হানিরপাড় গ্রামের কৃষক আমান উল্ল্যা প্রধান বলেন, “আমাদের দোষ কী? বীজতলা করেছি ঠিকভাবে। এখন খাল দিয়ে পানি না নামার কারণে বীজ সব নষ্ট। নতুন করে বপন করলে সময় চলে যাবে।”
আরেক কৃষক হাসিনা বেগম বলেন, “আউশ মৌসুমের এই সময়ে এমন ক্ষতি হলে সারা বছরের খাবারই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।”

কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. মেহেদী হাসান বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থাকাটা আমাদের দায়িত্ব। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা যতটা সম্ভব দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করবো।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, “৮ হেক্টরের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূল কারণ অতিবৃষ্টি ও পানি নিষ্কাশনের সমস্যাজনিত জলাবদ্ধতা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

শহীদ

×