ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সফল নাইজেরিয়ান ব্যবসায়ী ও পরিবারকে ভিসা না দিয়ে বিতর্কে হোম অফিস

প্রকাশিত: ১৬:২৮, ৪ জুন ২০২৫

সফল নাইজেরিয়ান ব্যবসায়ী ও পরিবারকে ভিসা না দিয়ে বিতর্কে হোম অফিস

ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের বিরুদ্ধে নাইজেরিয়ানদের বিরুদ্ধে 'বর্ণবাদী দমনপীড়নের' অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি নাইজেরিয়ার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের প্রধান স্যামুয়েল অনিয়েকাচি ইবোউচি ও তার পরিবারকে যুক্তরাজ্যে ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ভিসা না দেওয়ার ঘটনায় এ অভিযোগ ওঠে।

স্যামুয়েল ইবোউচি তার প্রতিষ্ঠান BKay Security Ltd-এর মাধ্যমে নাইজেরিয়া এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা সেবা দিয়ে থাকেন। তিনি, তার স্ত্রী (একজন সফল ব্যবসায়ী) এবং ১৮ মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে এই গ্রীষ্মে তিন সপ্তাহের জন্য যুক্তরাজ্যে আসার আবেদন করেন। তারা লন্ডনে বসবাসকারী স্যামুয়েলের বোন হোপ ইবোউচি-বিলস ও তার স্বামী নিক বিলসের সঙ্গে সময় কাটাতে চেয়েছিলেন। নিক বিলস যুক্তরাজ্যের অভিবাসন সহায়তাকারী সংস্থা Ramfel-এর ক্যাম্পেইন প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, পরিবারটি আর্থিক ও বসবাস সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র জমা দিলেও হোম অফিস তাদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। ভিসা প্রত্যাখ্যানের চিঠিতে লেখা হয়: "এই স্পনসরশিপ আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি যে আপনারা যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ শেষে ফিরে যাবেন।" একইসঙ্গে ভবিষ্যতেও তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে বলেও জানানো হয়।

হোম অফিস এ-ও প্রশ্ন তোলে, একজন স্বনিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে ইবোউচি কীভাবে আয় করছেন, যদিও তিনি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন।

BKay Security অতীতে নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট গুডলাক জনাথন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক, সেলিব্রিটি এবং ফুটবলার অ্যালেক্স ইওবি (ফুলহ্যাম ও নাইজেরিয়া জাতীয় দলের খেলোয়াড়) সহ অনেককে সেবা দিয়েছে।

গত মাসে সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে যে, ব্রিটিশ সরকার কিছু নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপের পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে নাইজেরিয়াও রয়েছে।

নিক বিলস বলেন, “নিশ্চিতভাবেই এই ভিসা প্রত্যাখ্যান হলো ব্রিটিশ সরকারের প্রকাশ্য বর্ণবাদী দমন নীতির অংশ। স্যামুয়েল ও তার স্ত্রী দু’জনই সফল ব্যবসায়ী এবং যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। এক বছর আগেই আবেদন করলে হয়তো ভিসা পেতেন। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক যে এখনকার লেবার সরকার পূর্ববর্তী কনজারভেটিভদের চেয়েও বেশি বৈরী অভিবাসন নীতি নিচ্ছে।”

স্যামুয়েল ইবোউচি বলেন, “আমি ভীষণ হতাশ। আমি কেবল পরিবারসহ আমার বোনের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সমস্ত প্রমাণপত্র দিয়েছিলাম, এমনকি দুই পরিবারের একসঙ্গে সময় কাটানোর ছবিও জমা দিয়েছি। যুক্তরাজ্যে থাকার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই।”

হোপ ইবোউচি-বিলস বলেন, “আমার দুই সন্তান খুবই উত্তেজিত ছিল তাদের চাচাতো ভাই, ফুপি ও কাকাকে দেখবে বলে। তারা লন্ডনে কোথায় কোথায় নিয়ে যাবে, তাও ঠিক করে রেখেছিল। এখন তাদের কীভাবে বোঝাব যে যুক্তরাজ্য সরকার শুধু নাইজেরিয়ান হওয়ার কারণে তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছে না?”

তিনি আরও বলেন, “আমি আগেও অনেক আত্মীয়-স্বজনকে স্পনসর করেছি, সবাই এসেছেন এবং যথাসময়ে ফিরে গেছেন। আমার ভাইও কোনোভাবেই যুক্তরাজ্যে থেকে যেত না। আমি বিশ্বাস করি না যে হোম অফিসের কর্মকর্তা আমাদের আমন্ত্রণপত্রটি আদৌ পড়েছেন।”

হোম অফিসের এক মুখপাত্র জানান, “প্রত্যেকটি আবেদন নির্দিষ্ট তথ্য ও নির্দেশিকা অনুসারে বিচার করা হয়। কোনো আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে তার কারণ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়।”

হোম অফিস সূত্র জানায়, যাদের ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তারা আবার আবেদন করতে পারেন এবং আগের প্রত্যাখ্যানপত্রে উত্থাপিত বিষয়গুলোর জবাব দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন। আর্থিক অবস্থা এই ভিসা প্রত্যাখ্যানের একটি বিবেচ্য কারণ ছিল বলেও সূত্র জানায়।

সূত্র: https://urli.info/-ybv

মিরাজ খান

×