ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পরমাণু ইস্যুতে ইরানের দৃঢ় অবস্থানের কাছে নত হলো যুক্তরাষ্ট্র?

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ৪ জুন ২০২৫

পরমাণু ইস্যুতে ইরানের দৃঢ় অবস্থানের কাছে নত হলো যুক্তরাষ্ট্র?

ছবি:সংগৃহীত

চিরকাল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে দেশটির অবস্থান সবসময়ই ছিল কঠোর। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের দাবি, সেই কঠোর অবস্থানে পরিবর্তন এনেছে ওয়াশিংটন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্পমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দিয়েই ইরানকে একটি নতুন অন্তর্বর্তী পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই ইরানের সঙ্গে নতুন পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রশ্নে দুই পক্ষের বিপরীতমুখী অবস্থান এখনো চূড়ান্ত সমঝোতার পথে বড় বাধা হয়ে আছে।

ট্রাম্প এর আগেও বারবার বলেছেন, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। এমনকি গত সোমবার ট্রুথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প আবারও তার দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে বাস্তবতা বলছে, ইরান নিজেদের ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি’র অধিকার থেকে এক চুলও সরে আসেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির তোয়াক্কা না করেই দেশটি বলেছে,  যদি যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করুক, তাহলে একটা চুক্তির পথে হাঁটা সম্ভব; তবে যদি শান্তিপূর্ণ কার্যক্রম বন্ধের দাবি উঠে, তাহলে কোনও সমঝোতার সম্ভাবনা নেই।

নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এবার এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে ইরানকে নতুন পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র। একইসাথে একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠনের মধ্য দিয়ে ইরানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করছে ওয়াশিংটন। স্টিভ উইটকফ নামক মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধির স্বাক্ষরিত প্রস্তাব অনুযায়ী, এই চুক্তির আওতায় ইরান সুফল পেতে শুরু করলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনা ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হবে।

 

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ প্রস্তাব স্পষ্টতই ইরানের অনড় অবস্থানের প্রতি এক ধরনের নমনীয়তা প্রদর্শন। মুখে হুমকি দিলেও বাস্তবতার আলোকে ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তির পথে হেঁটেছে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি সংকট এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে পুরোপুরি শত্রু হিসেবে রাখতে চাইছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত ইরান এই প্রস্তাবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। একইভাবে চুপ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলও। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুঞ্জন উঠেছে, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে ইসরাইল সামরিক অভিযানের পথেও যেতে পারে।

 

 

সবমিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনায় নাটকীয় পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে এই নমনীয়তা সত্যিই যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এটি শুধু দুই দেশের সম্পর্ক নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতেও বড় পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে। এখন দেখার বিষয়, তেহরান কীভাবে এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়।

আঁখি

×