ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠক

সংস্কার ও জুলাই সনদে একমত  হলেও নির্বাচনের সময়  নিয়ে মতবিরোধ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:০৬, ৩ জুন ২০২৫

সংস্কার ও জুলাই সনদে একমত  হলেও নির্বাচনের সময়  নিয়ে মতবিরোধ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় দ্রুত সংস্কার

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় দ্রুত সংস্কার ও জুলাই সনদ ঘোষণার পক্ষে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইতিবাচক সাড়া দিলেও নির্বাচন প্রশ্নে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ থেকেই গেছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে  অনড় থাকলেও জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংস্কার ও জুলাই সনদের আগে নির্বাচন না দেওয়ার আগের অবস্থানই বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছে। তবে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে সমন্বিতভাবে একসঙ্গে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
সোমবার  বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় দলগুলো নির্বাচন প্রশ্নে অতীতের মতবিরোধ কাটাতে পারেনি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুতই জুলাই সনদ ঘোষণার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, চলতি সপ্তাহে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে ঐকমত্য কমিশন। এসব বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নাও থাকতে পারেন। ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বা আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল থাকতে পারেন। এসব আলোচনা শেষে খুব দ্রুতই জুলাই ঘোষণা করা হবে।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন ডিসেম্বরের পর যাওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাইয়ে সংস্কার ও জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মাঝে নির্বাচন চেয়েছে। অন্যদিকে, এনসিপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘জুলাই সনদের’ আগে নির্বাচন চায় না তারা। তিনটি রাজৗনতিক দল ছাড়া বাকি সব দল আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে বলে  দাবি করেন গণআধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক।
প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বৈঠকে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অংশ নেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ আবু তাহের। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হারুনুর রশীদ। এনসিপির পক্ষে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার।
এ ছাড়া লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রেদওয়ান আহমেদ, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সিপিবির ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক রুবেল, বাসদের সিনিয়র নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, খেলাফত মজলিশের আহমদ আবদুল কাদের, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের সাকিব আনোয়ার, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীসহ মোট ২৮টি রাজনৈতিক দলের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। 
এর আগে, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম দফার আলোচনা শেষ হয় ১৯ মে। প্রথম দফায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়। সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার একটিও কারণ নেইÑ বিএনপি ॥ বৈঠকের পর ব্রিফিংকালে নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, নির্বাচন ডিসেম্বরের পর যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আলাপ-আলোচনা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে আমরা প্রায় কাছাকাছি আসতে সক্ষম হয়েছি। এখনো দ্বিতীয় পর্যায়ের আলাপ-আলোচনায় তারা আমাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। মনে হয়েছে কিছু কিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, বিশেষ করে সংবিধান সংক্রান্ত কিছু ইস্যুতে তারা একমত হওয়ার জন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘হয়তো আমরা জাতীয়ভাবে সব বিষয়ে একমত পোষণ করতে পারব না। এটাই হচ্ছে বিউটি অব দ্য ডেমোক্রেসি। কিন্তু আমরা আলাপ আলোচনা করব। আমরা কোথাও কোথাও দ্বিমত পোষণ করব। কোথাও কোথাও হয়তো আমরা একমত হতে পারব। কোথাও আমরা একমত হওয়ার কাছাকাছি আসতে পারব। এভাবেই একটা জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হবে।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমরা তাই প্রস্তাব করব যে প্রস্তাবগুলো গৃহীত হলে একটি সুন্দর শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে, এখানে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স প্রতিষ্ঠিত হবে, রাষ্ট্রের সব অঙ্গের মধ্যে একটি ভারসাম্য অবস্থা সৃষ্টি হবে। তার মধ্য দিয়ে একটা হারমোনিয়াস কো-অপারেশন হবে ইন বিটুইন অল অর্গানস অব স্টেট। আমরা শহীদদের রক্তের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী এ দেশের জনমানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য অবশ্যই সে সব বিষয়কে বিবেচনা করব, যেগুলো আমরা গ্রহণ করলে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠন করতে পারব এবং এর মধ্য দিয়ে এই দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে পারব।
এক প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা মনে করি ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা খুবই সম্ভব এবং এর আগেই জরুরি ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে নির্বাচনমুখী সেই সংস্কারগুলোকে চিহ্নিত করে আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়ন করব। এমন কোনো সংস্কার নাই যেগুলো এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে রিপোর্ট পেয়েছি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনেকগুলো অর্ডিন্যান্স এবং অনেকগুলো সংশোধনী এসেছে বিভিন্ন সেক্টরে, যেগুলো অলরেডি বাস্তবায়ন হয়েছে। আরও অনেকগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় আছে। সেগুলো অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে করা সম্ভব, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব, এমনকি কিছু কিছু সংস্কার অফিস আদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব। সেগুলোর জন্য বিশেষ করে সংবিধান সংশোধনী ব্যতিরেকে অন্যান্য সব সংশোধনীর বিষয়ে একমত হবে সংস্কার প্রস্তাবে, সেগুলো অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বা অফিস আদেশের মাধ্যমে এক মাসের ভেতরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেটা আমরা বুঝিয়ে দিয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সুতরাং নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার একটিও কারণ উল্লেখ করার মতো নেই। এই বিষয়টা আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এবং আমরা আবারও অ্যাপ্রোচ করেছি। আজকের বৈঠকে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে আমরা যেটা দেখলাম যে, প্রায় সবাই ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য তাদের প্রস্তাব রেখে।’
তিনি বলেন, ‘এখন প্রধান উপদেষ্টা সেটা বিবেচনা করবেন বলে আমরা আশা করি এবং আমরা মনে করি তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নিরপেক্ষভাবে তার ভূমিকা পালন করবেন, কারও প্রতি রাগ-অনুরাগ-বিরাগ প্রদর্শন করবেন না এবং উপদেষ্টামণ্ডলীকে নিরপেক্ষভাবে আবার যেন ঢেলে সাজান সেই প্রস্তাবও আমরা রেখেছি। আমরা মনে করি জাতি তার কাছে চূড়ান্ত নিরপেক্ষতা আশা করে। তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ইতোমধ্যে যথেষ্ট সময় ক্ষেপণ করেছে। আশা করি তারা আর বেশি সময় নেবেন না। এই মাসের মধ্যে সবকিছু কম্পাইল করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।’
জুলাইয়ে সংস্কার ও জানুয়ারি-এপ্রিলের মাঝে নির্বাচন চায় জামায়াত ॥  বৈঠক থেকে বেরিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাদের বলেন, সংস্কারের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। জুলাইয়ের মাঝে সংস্কার শেষ করতে হবে। বেশিরভাগ বিষয়ে একমত হয়েছি। কিছু বিষয়ে সামান্য দ্বিমত আছে, মঙ্গলবার সকল দলকে একসঙ্গে বৈঠক করে তা ঠিক করার চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, যে সমস্ত বিষয়ে মৌলিক কিন্তু একমত হচ্ছে না তাও আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যাবে বলে মনে করি। একেবারে একমত না হলে কি করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা করব। তিনি বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে রিফর্ম হবে। তারপর একটি জুলাই সনদ হবে তাতে আমরা সকল দল নীতিগত একমত এই চার্টারে স্বাক্ষর করব।
জামায়াতের নায়েবে আমির আরও বলেন, আলোচনা হয়েছে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর আস্থা আমরা পুনর্ব্যক্ত করেছি। একটি সফল সুন্দর নির্বাচন হোক তাই চেয়েছি। নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে তিনটি বক্তব্য এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনে। কিছু রাজনৈতিক দল ডিসেম্বর চেয়েছেন। আমাদের থেকে আমরা বলেছি যে, মে এবং জুন মাসে নির্বাচন করার উপযুক্ত সময়।
তিনি বলেন, সেই অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার কমিটমেন্ট রাখতে গেলে জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মাঝে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যায়। আমরা বলেছি এর মাঝে একটা তারিখ ঘোষণা করুন। আমরা কোনো তারিখ বলতে চাই না। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝে একটি তারিখ দিলে জনমনে যে শঙ্কা এবং অস্বস্তি আছে তা ঠিক হয়ে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রচারণার দিকে মনোযোগী হবে। কোন দল নির্বাচনে একটি তারিখেই করতে হবে এমন শক্ত হওয়া উচিত নয়।
জামায়াতের এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আমরা প্রহসনমূলক নির্বাচন চাই না। তাই প্রত্যেকটি জায়গায় স্বচ্ছতা যাতে তৈরি হয়, এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে।
‘জুলাই সনদের’ আগে নির্বাচন চায় না এনসিপি ॥ বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফিংকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগামী ৫ আগস্ট আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হবে। এটি আমরা উদ্যাপন করতে চাই। ৫ আগস্টের আগেই জুলাই মাসে যেন জুলাই সনদ রচিত হয়। জুলাই সনদের মাধ্যমে দেশের মানুষ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা এবং শাসন কাঠামো দেখতে চান। জুলাই সনদ হওয়ার আগে যেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা হয়। এতে সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
তিনি বলেন, যেসব রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে আমরা তাদের প্রতি এবং সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছি। ১৬ বছর অপেক্ষা করেছি, ১০ মাস অপেক্ষা করেছি, আরও দুই মাস যেন অপেক্ষা করি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি এবং সরকারকে সময় দেই। এ দুই মাসের মধ্যে আমরা জুলাই সনদ রচনা করে ফেলি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, জুলাই সনদের পরই সরকার যেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দেয়। জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য ৩০ কার্য দিবস ছিল, সেটা অনেক কার্য দিবস হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কোনো ধরনের পদক্ষেপ দেখছি না। আমরা আহ্বান জানিয়েছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেন জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়িত হয়। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, নির্বাচন কমিশন আইন সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা উচিত।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার নিয়ে মতবিরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। তবে দলীয় স্বার্থে সরকার যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় সে জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি। আমরা যদি দেশের স্বার্থ চিন্তা করি তাহলে আমরা অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারব।
নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেইÑ প্রেস সচিব ॥ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনÑ যে কোনো সময় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান মতানৈক্য দূর করে একটি সর্বসম্মত কাঠামো তৈরি করার লক্ষ্যে এ আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, খুব দ্রুতই জুলাই চার্টার গৃহীত হবে। সভার পর বাইরে বেরিয়ে প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

সেটা ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে বা জুনে হতে পারে। তবে ৩০ জুনের পরে হবে না। কমিশনের সভায় সব দলের উপস্থিতির জন্য তাদের প্রধান উপদেষ্টা ধন্যবাদ জানিয়েছেন উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, জাতীয় স্বার্থে সবাই একসঙ্গে আলোচনায় বসায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। আগে তাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে মতবিভেদ দেখা দিয়েছিল। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার উদ্দেশ্যই হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি করা।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, চলতি সপ্তাহে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করতে পারে ঐকমত্য কমিশন। হয়তো এসব বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন না। অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বা আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল থাকতে পারেন। তিনি জানান, খুব দ্রুতই জুলাই ঘোষণা শুরু হবে।

×