ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি বিরোধিতার অভিযোগে ট্রাম্পের ফাঁদে! তদন্তের ঝড় পড়তে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে!

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:৩৮, ১ জুন ২০২৫

অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদি বিরোধিতার অভিযোগে ট্রাম্পের ফাঁদে! তদন্তের ঝড় পড়তে যাচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে!

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে বড়সড় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ৩ বিলিয়ন ডলারের গবেষণা অনুদান বাতিলের হুমকি দিয়েছেন, ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে হার্ভার্ডের সঙ্গে থাকা ১০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করে বিকল্প খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন এবং পেশাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করার উদ্যোগ নেওয়ায় এটি রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধের ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিক্ষোভের পর হার্ভার্ডে উদ্ভূত ইহুদি বিরোধিতার অভিযোগ যথাযথভাবে মোকাবিলা না করাই এই পদক্ষেপের প্রধান কারণ। ট্রাম্প হার্ভার্ডের রাজনৈতিক পক্ষপাত, চীনের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক এবং সংখ্যালঘু বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিরও সমালোচনা করেছেন। প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, হার্ভার্ডকে বৈচিত্র্যভিত্তিক প্রোগ্রাম বাতিল, ভর্তি ও নিয়োগে সংস্কার, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ‘আমেরিকান মূল্যবোধ’-বিরোধী মতাদর্শ যাচাই এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে মতভিন্নতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

জবাবে হার্ভার্ড এই পদক্ষেপ ঠেকাতে আইনি লড়াই শুরু করেছে। এরইমধ্যে আদালত বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা স্থগিতাদেশের সিদ্ধান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার জানিয়েছেন, হার্ভার্ড শিক্ষা ও সত্যের প্রতি তার অঙ্গীকারে অটল থাকবে।

এই লড়াই শুধু হার্ভার্ডে সীমাবদ্ধ নয়। প্রিন্সটন ও ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার মতো অন্যান্য নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও প্রশাসনিক তদারকি ও অনুদান বন্ধের মুখে পড়তে হচ্ছে। অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ইহুদি বিরোধিতার অভিযোগে তদন্ত চলছে, আরও অনেক প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতিগত ভিত্তিতে পরিচালিত প্রোগ্রামের অভিযোগে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, এটি মার্কিন উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে রক্ষণশীল আদর্শে রূপান্তরের একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস। যদিও অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বাধীনতা ও বৈচিত্র্যকে ধ্বংস করছে।

তবে জনমত জরিপ বলছে, ট্রাম্পের সমর্থকরা এই উদ্যোগকে সমর্থন করলেও বেশিরভাগ সাধারণ আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশে রয়েছে এবং এই তহবিল বন্ধের বিরোধিতা করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনি পথে ট্রাম্পের পরিকল্পনা থেমে গেলেও তার পদক্ষেপ ইতোমধ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গবেষণার পরিসর সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

একইসঙ্গে, এটাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর রাজনৈতিক আগ্রাসনের বাইরে নেই। ‘আইভি লিগ’ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঐতিহ্যবাহী সুরক্ষা এখন ভেঙে পড়ছে—এবং অনেকের মতে, এটা উদারপন্থীদের পতন না মুক্তি, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

আবির

×