
গাজার একমাত্র কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারে বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয় ইসরাইল।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। এটি গাজার উত্তরাঞ্চলের একমাত্র ডায়ালাইসিস সেন্টার। গুরুত্বপূর্ণ এই অবকাঠামোতে এর আগেও হামলা চালানো হয়েছে। তবে এবার এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হলো। এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি)। সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, ইসরাইলি বাহিনী উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় অবস্থিত নোরা আল-কাবি কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারে বোমা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই সেন্টারটি ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের অংশ এবং এটি ছিল উত্তর গাজার একমাত্র ডায়ালাইসিস সেন্টার, যা ১৬০ জনেরও বেশি কিডনি রোগীকে সেবা দিচ্ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মুনির আল-বুরশ জানান, কয়েক সপ্তাহ আগে ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেই ডায়ালাইসিস সেন্টারটি আংশিক চালু হয়েছিল। তার কিছু দিনের মধ্যেই আবারও হামলা চালিয়ে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হলো এটি।
তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে ইসরাইলি বুলডোজার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে। আর এই দৃশ্যই হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরেছে। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, চলমান যুদ্ধের মধ্যে কিডনি রোগে আক্রান্ত ৪১ শতাংশ রোগী মারা গেছেন, কারণ তাদের ডায়ালাইসিস সেন্টারে পৌঁছতে দেওয়া হয়নি, কিংবা সেগুলোর অংশ বা পুরো প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে ইসরাইলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫০০। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫৪ হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে।
ইসরাইলের ত্রাণ বিতরণ ভয়াবহ ‘মৃত্যুফাঁদ’-জাতিসংঘ ॥ গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উপত্যকায় ইসরাইলের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা এখন ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় গাজা উপত্যকার দক্ষিণ প্রান্তের রাফাহ শহরে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এই শহরটি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ভয়াবহ বোমাবর্ষণে প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, সহায়তার নামে এই অপমানজনক ব্যবস্থার ফলে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষকে বহু মাইল হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়েছে ওই ধ্বংসস্তূপে। আবার সেখানে গিয়ে ত্রাণের পরিবর্তে বুক ঝাঁজরা হয়ে যাচ্ছে বুলেটে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণ নিরাপদ ও বৃহৎ পরিসরে পরিচালিত না হলে গণদুর্ভিক্ষ অনিবার্য। ইসরাইলকে অবশ্যই গাজা থেকে অবরোধ তুলে নিতে হবে এবং জাতিসংঘকে বাধাহীন ও নিরাপদভাবে ত্রাণ প্রবেশ ও বিতরণের অনুমতি দিতে হবে। এই সংকট মোকাবিলায় একমাত্র ইউএনআরডব্লিউএই সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।