ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এফপিভি ড্রোন কেন আলোচনায়?

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ৪ জুন ২০২৫

এফপিভি ড্রোন কেন আলোচনায়?

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তিনির্ভরতা ও কৌশলগত উদ্ভাবনের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এফপিভি ড্রোন। ‘অপারেশন স্পাইডারস ওয়েব’ নামের একটি সামরিক অভিযানে শতাধিক ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনের সাফল্য বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এনেছে এই বিশেষ ধরনের ড্রোন প্রযুক্তি। সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার, নিশানাভেদী আক্রমণ ও কম খরচে যুদ্ধ চালানোর সক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই ড্রোন।

অপারেশন স্পাইডারস ওয়েবে শতাধিক ড্রোনের ব্যবহার

‘অপারেশন স্পাইডারস ওয়েব’ নামের সাম্প্রতিক অভিযানে ইউক্রেন ব্যবহার করেছে ১১৭টি ড্রোন। এর মাধ্যমে ধ্বংস করা হয় রাশিয়ার প্রায় ৪০টি সামরিক বিমান। রুশ বাহিনীর উন্নত রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেও এই আক্রমণ রাডার ফাঁকি দিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় চমকে ওঠে পুরো বিশ্ব।

এফপিভি ড্রোনের আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল

এই অভিযানে ব্যবহার করা হয় এফপিভি বা ফার্স্ট পার্সন ভিউ ড্রোন। ঘরোয়া উপায়ে তৈরি এসব ড্রোন চালককে সরাসরি লাইভ ভিডিও সম্প্রচার দেয়, যা কম্পিউটার কিংবা মোবাইল স্ক্রিনে দেখা যায়। এই ভিডিও দেখে লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানেন ড্রোনচালক।

ঘনিষ্ঠ দূরত্বে আক্রমণের জন্য তৈরি থাকে ড্রোন

এফপিভি ড্রোনগুলোর রেঞ্জ সাধারণত মাত্র কয়েক কিলোমিটার। ফলে এগুলো শত্রুর ঘাঁটির খুব কাছ থেকে গোপনে প্রস্তুত করে রাখা হয়। অভিযানের আগে পর্যবেক্ষণ ড্রোন দিয়ে আশপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার পরই আকাশে ওড়ানো হয় এই আক্রমণাত্মক ড্রোন।

ড্রোনের মডেল গোপন, তবে প্রযুক্তি অত্যাধুনিক

নিরাপত্তার স্বার্থে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ড্রোনগুলোর নির্দিষ্ট মডেলের নাম প্রকাশ করেনি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিযানে ব্যবহার হয়েছে দেশটির অস্ত্রভাণ্ডারে থাকা সবচেয়ে আধুনিক ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্রতিরোধী ড্রোন। ইউক্রেনের সংগ্রহে বর্তমানে রয়েছে প্রিডেটর, কাইজাক, কুইন হর্নেট ও পেগাসাসের মতো দ্রুতগামী এবং জ্যামিং প্রতিরোধী ড্রোন। এগুলোর আকার ছোট হওয়ায় সহজে শত্রুপক্ষের রাডারে ধরা পড়ে না।

কম খরচে অধিক কার্যকারিতা

ড্রোন ব্যবহারের আরেকটি বড় কারণ, এতে সরাসরি সেনা সদস্যদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে না। পাশাপাশি যুদ্ধবিমান বা ট্যাংকের মতো অস্ত্রের বিপুল খরচ বহনের সক্ষমতা না থাকায় ইউক্রেন তুলনামূলক কম খরচে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, বিস্ফোরকসহ একটি এফপিভি ড্রোন তৈরিতে খরচ হয় মাত্র ৫০০ ডলার। এই কম খরচ দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ পরিচালনায় ইউক্রেনকে বড় ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।

এফপিভি ড্রোনের প্রযুক্তি শুধু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধেই নয়, সামরিক কৌশলগত ব্যবস্থার ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করছে। কম খরচে, কার্যকর এবং প্রযুক্তিনির্ভর এই ড্রোনের সফলতা যুদ্ধের ধরণ বদলে দিচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুদ্ধক্ষেত্রে এমন উদ্ভাবন ভবিষ্যতের লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/2jpjncxf

আফরোজা

×