ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চীনের রাজত্ব: তুরস্ক ও ভারতের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই!

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১ জুন ২০২৫

চীনের রাজত্ব: তুরস্ক ও ভারতের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই!

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের তরমুজ উৎপাদনে চীন অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে রয়েছে। ২০২২ সালে দেশটি প্রায় ৬ কোটি ৩৮ লাখ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন করেছে, যা বৈশ্বিক উৎপাদনের ৬০ শতাংশেরও বেশি। উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও অনুকূল জলবায়ু চীনকে এই খাতে বিশ্বনেতায় পরিণত করেছে।

চীনের তরমুজ উৎপাদনে সাফল্যের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন কারণ। দেশটির ঝিনজিয়াং, গানসু এবং ইনার মঙ্গোলিয়ার মতো অঞ্চলগুলোতে তরমুজ চাষের জন্য রয়েছে অনুকূল পরিবেশ—প্রচুর সূর্যালোক, উপযুক্ত তাপমাত্রা ও উর্বর মাটি।

এর পাশাপাশি চীন আধুনিক কৃষি পদ্ধতি যেমন উন্নত বীজ ব্যবহার, কার্যকর সেচ ব্যবস্থা এবং মেকানাইজড ফার্মিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে থাকে। এসবের সম্মিলিত প্রয়োগেই উৎপাদন সক্ষমতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

২০২২ সালের শীর্ষ ৫ তরমুজ উৎপাদনকারী দেশ

ক্রমিক দেশ বার্ষিক উৎপাদন (মেট্রিক টন)

১ চীন ৬০,৩৮৬,১২১

২ তুরস্ক ৩,৩৯৪,৭৮৩

৩ ভারত ৩,৩০৮,০০০

৪ আলজেরিয়া ২,০২২,৮৯২

৫ ব্রাজিল ১,৯১২,৯০৯

চীন:

তরমুজ উৎপাদনে চীন বিশ্বে একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে। দেশটির প্রায় প্রতিটি প্রদেশেই এই ফলের চাষ হয়ে থাকে, তবে গানসু, ঝিনজিয়াং ও ইনার মঙ্গোলিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উৎপাদনের বড় অংশই দেশীয় চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের তরমুজ রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

তুরস্ক:

প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন উৎপাদন করে তুরস্ক দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় ও এজিয়ান অঞ্চল, বিশেষ করে আদানা ও আনতালিয়া শহরগুলোতে তরমুজ চাষ ব্যাপকভাবে হয়।

ভারত:

ভারতে ৩.৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি তরমুজ উৎপাদিত হয়। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ এবং কর্ণাটক হল প্রধান উৎপাদনকারী রাজ্য। ভারতজুড়ে তরমুজ গ্রীষ্মকালের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল।

আলজেরিয়া:

আলজেরিয়া ২০২২ সালে ৫৪,০০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করে, যেখানে গড় ফলন ছিল হেক্টরপ্রতি ৩৭ টন। উৎপাদনের ক্ষেত্র কিছুটা কমলেও প্রতি হেক্টরে উৎপাদন বেড়েছে ৬.৪ শতাংশ।

ব্রাজিল:

ব্রাজিলে তরমুজ উৎপাদন ছিল ১.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যদিও এটি আগের বছরের তুলনায় ১০.৭ শতাংশ কম। দেশটির আবহাওয়া ও মাটি তরমুজ চাষে উপযোগী হলেও উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দেশগুলো:

রাশিয়া, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, সেনেগাল ও উজবেকিস্তানও তরমুজ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব দেশে ভিন্ন ভিন্ন জাত ও চাষ পদ্ধতি রয়েছে।

চীনে তরমুজের জনপ্রিয়তা: গ্রীষ্মকালে চীনের প্রায় প্রতিটি ঘরেই তরমুজ দেখা যায়। দেশটিতে মাথাপিছু তরমুজ খাওয়ার হার বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ।

সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: বিভিন্ন উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানে তরমুজ সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

রপ্তানি সম্ভাবনা: অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি চীনের তরমুজ রপ্তানি বেড়েছে, যা এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী গরমের প্রকোপ ও ফলের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে তরমুজের বাজারও ক্রমেই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনসহ অন্যান্য দেশের জন্য এই শিল্প আরও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

 

ফারুক

×