ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নাক ডাকা থেকে কী কী রোগ হতে পারে? সতর্ক না হলে ঘটতে পারে মারাত্মক বিপদ

প্রকাশিত: ২৩:২২, ৩০ মে ২০২৫

নাক ডাকা থেকে কী কী রোগ হতে পারে? সতর্ক না হলে ঘটতে পারে মারাত্মক বিপদ

ছবিঃ সংগৃহীত

নাক ডাকা আমাদের সমাজে বহু সাধারণ একটি বিষয়। প্রায় প্রতিটি ঘরেই হয়তো এমন একজন রয়েছেন যিনি ঘুমের সময় নাক ডাকেন। কিন্তু আপনি জানেন কি, এই সাধারণ নাক ডাকা হতে পারে অনেক জটিল ও প্রাণঘাতী রোগের পূর্বাভাস?

নাক ডাকার বৈজ্ঞানিক নাম Obstructive Sleep Apnea (OSA)। এটি এমন একটি সমস্যা, যেখানে ঘুমের সময় শ্বাসনালী সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয় এবং মস্তিষ্ক বারবার জেগে ওঠে। এটি শুধু ঘুমের ব্যাঘাতই ঘটায় না, বরং শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্ষতি ডেকে আনে।

নাক ডাকার কারণ ও প্রক্রিয়া

  • ঘাড়ের পেছনে ও গলার ভিতরে থাকা সফট টিস্যুগুলো ঘুমের সময় শিথিল হয়ে শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয়।

  • এতে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয় এবং শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়

  • ফলে ঘুমন্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক সংকেত দেয়, সে জেগে ওঠে—যদিও হয়তো নিজেই টের পায় না।

নাক ডাকার ফল হিসেবে যেসব রোগ হতে পারে:

❤️ হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ

  • স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের প্রাচীর মোটা হওয়া (LVH), এবং Atrial Fibrillation বা হার্টের অনিয়মিত স্পন্দনের হার অনেক বেশি।

  • স্ট্রোকহঠাৎ ঘুমের মধ্যে মৃত্যু (Sudden Cardiac Death)-র ঝুঁকি বেড়ে যায়।

🧠 মস্তিষ্ক ও স্নায়বিক সমস্যা

  • ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়ায় স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া), মনোযোগের ঘাটতি, ও মুড ডিসঅর্ডার হতে পারে।

  • দিনভর ঘুম ঘুম ভাব, অবসাদ, বা কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায়।

🍔 মেটাবলিক সমস্যা

  • রক্তে কোলেস্টেরল (LDL, Triglyceride) ও চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়।

  • টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

🫁 শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা

  • নাক বন্ধ থাকা (Nasal Blockage), গলার সমস্যা, এবং নাক দিয়ে কম বাতাস যাওয়া—এগুলো নাক ডাকার পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।

🧬 অন্যান্য

  • Hypothyroidism, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, এবং স্থূলতা (Obesity)—এসব OSA-র মূল ঝুঁকিপূর্ণ কারণ।

কীভাবে নিশ্চিত হবেন আপনি এই সমস্যায় ভুগছেন?

সঠিক নির্ণয়ের জন্য দরকার Polysomnography (Sleep Study)। এতে ঘুমের সময়:

  • হার্টবিট, অক্সিজেন লেভেল, শ্বাস-প্রশ্বাস, ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হয়।

অতিরিক্ত পরীক্ষা:

  • ECG, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, এক্স-রে, লিপিড প্রোফাইল, ব্লাড সুগার, কিডনি ও লিভার ফাংশন ইত্যাদি।

চিকিৎসা ও করণীয়

✅ লাইফস্টাইল পরিবর্তন

  • ওজন কমানো (BMI ঠিক রাখা)

  • অ্যালকোহল ও ধূমপান বন্ধ

  • হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে তার চিকিৎসা

  • কম চর্বিযুক্ত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ

✅ মেডিকেল চিকিৎসা

  • CPAP (Continuous Positive Airway Pressure) মেশিন: ঘুমের সময় সামান্য চাপ দিয়ে বাতাস প্রবাহিত করে শ্বাসনালী খোলা রাখে।

  • কেউ কেউ প্রথমে ভয় পেলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি রোগীর জীবনযাত্রা উন্নত করে।

✅ সার্জারি ও ডিভাইস

  • মুখ ও গলার টিস্যু রিকনস্ট্রাকশন

  • Mandibular advancement devices ব্যবহার

  • কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করতে হয়

শেষ কথা

নাক ডাকা এখন আর হাস্যকর কোনও ব্যাপার নয়। এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত জটিল ও বিপজ্জনক স্বাস্থ্যঝুঁকি। তাই যারা নিয়মিত নাক ডাকেন, বিশেষ করে যাদের ওজন বেশি বা দিনে ঘুমঘুম ভাব থাকে—তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো।

সতর্ক হোন, সচেতন থাকুন—নাক ডাকা হতে পারে আপনার হৃদরোগ, স্ট্রোক বা মৃত্যুর কারণ।

সূত্রঃ https://youtu.be/23qK0GxXg-o?si=WhOEFbC3MPY8Lnkw

ইমরান

×