ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যুবরাজকে পাঠিয়ে ইরানকে গোপন ও রহস্যময় বার্তা সৌদির

প্রকাশিত: ০২:২১, ১ জুন ২০২৫

যুবরাজকে পাঠিয়ে ইরানকে গোপন ও রহস্যময় বার্তা সৌদির

ছবি: সংগৃহীত

চালক্য নীতি অনুযায়ী শত্রু শত্রু মিলে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে—এ যুক্তি যেন বাস্তব রূপ নিচ্ছে ইরান, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের জটিল ভূকৌশলগত সমীকরণে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরমাণু চুক্তির প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে এবার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরব মুখ খুলেছে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের বিপক্ষে।

সৌদি আরব স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছে ইরানকে—ট্রাম্পের পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব মেনে নিতে হবে, নইলে ইসরাইলি হামলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দুটি দেশের সরকারি সূত্র এবং দুই ইরানি কর্মকর্তার বরাতে এই তথ্য জানায় ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান গোপনে তেহরান সফর করেন। সেখানে ইরানি কর্মকর্তাদের তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন: “ট্রাম্পের প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুন, কারণ এটি ইসরাইলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ এড়ানোর একমাত্র পথ।” এই সফর ছিল দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সৌদি রাজপরিবারের কোনো জ্যেষ্ঠ সদস্যের প্রথম ইরান সফর।

সফরের পেছনে ছিলেন ৮৯ বছর বয়সী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় তিনি নিজেই পুত্র খালিদকে গোপন বার্তা দিয়ে তেহরানে পাঠান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়, গত ১৭ এপ্রিল ইরানের প্রেসিডেন্ট ভবনে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি উপস্থিত ছিলেন।

রয়টার্স জানায়, বৈঠকে প্রিন্স খালিদ বলেন, “ট্রাম্প আলোচনায় ধৈর্যহীন, দ্রুত একটি চুক্তি চান। আলোচনার জানালা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।” তিনি যুক্তি দেন—ইসরাইলের হামলার ঝুঁকির চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

এর এক সপ্তাহ আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় জানান, ইরানের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে সরাসরি আলোচনা চলছে। তিনি এ ঘোষণা দেন ওয়াশিংটনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপস্থিতিতে, যিনি তখন ইরানে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেই রয়টার্সের প্রতিবেদন পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। সৌদি আরব থেকেও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স খালিদের এই সফরকে অনেকে ঐতিহাসিক বলছেন। রিয়াদ ও তেহরান বহুদিন ধরে একে অপরের কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বী এবং প্রায়শই ছায়াযুদ্ধে বিপক্ষ শক্তিকে সমর্থন করে আসছিল। ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়, যা উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখে এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে।

তবে সাম্প্রতিক এই গোপন সতর্কবার্তা মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক অঙ্কে নতুন এক রহস্য তৈরি করেছে—বন্ধুত্বের ছায়ায় আবারও কি ঘনিয়ে আসছে নতুন সংঘাত?

ফরিদ 

×