প্রেমের ঘড়ি থেমে যাচ্ছে? সময়ের অভাবে আধুনিক সম্পর্কের সংকট ও সমাধান

আপনি কোনো সম্পর্কের মধ্যে থাকলে কখনো কি অনুভব করেছেন যে একে অপরের জন্য সময় অনেক কম পাচ্ছেন?

সকালের ব্যস্ততার মাঝেও যখন এক ঘণ্টার অবসর পান, তবুও সেই সময়টাকে পার্টনারের সঙ্গে কাটানোর বদলে লন্ড্রি করা, কাজের মেসেজের উত্তর দেয়া বা একঘেয়ে ভাবনায় হারিয়ে যাওয়ার অভ্যাস কি আপনারও আছে? এটিই সময়ের সংকট, যা কেবল ব্যস্ততার নাম নয়। একদিন এমন ব্যস্ততায় ভরা থাকে যে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ও মুহূর্তগুলোর জন্য সময়ই থাকে না।

প্যান্ডেমিক পরবর্তী যুগে ২৪ ঘণ্টা যেন যথেষ্ট নয়। সময়ের সংকট ধীরে ধীরে আমাদের প্রেম, ডেটিং ও সম্পর্কের ধরণ পরিবর্তন করছে।

সময় সংকট কী?
এটা শুধু একটি ভরা শিডিউল নয়, বরং এমন সময়ের অভাব যা দিয়ে বিশ্রাম, শ্বাস নেওয়া বা মনোযোগ দিয়ে কারো সঙ্গে সময় কাটানো যায়। শুধু পেশাগত কাজ নয়, দৈনন্দিন অন্যান্য কাজও সময় কেড়ে নেয়।

ভারতের ২০২৪ সালের টাইম ইউজ সার্ভে অনুযায়ী, ১৫-৫৯ বছর বয়সী নারীরা প্রতিদিন গড়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি অপ্রদত্ত গৃহকর্ম করেন, যেখানে পুরুষের সময় মাত্র দেড় ঘণ্টা। এছাড়া, সন্তান, বৃদ্ধ অভিভাবক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পরিবারের যত্ন নেওয়ায় নারীদের ওপর আরও ভার পড়েছে। এই ভার শুধু ‘আমার সময়’ কে নয়, ‘আমাদের সময়’কেও কেড়ে নিচ্ছে।

প্যান্ডেমিকের পর নতুন অগ্রাধিকার
প্যান্ডেমিক আমাদের জীবনযাত্রাকে বদলে দিয়েছে। অনেকেই বুঝতে পেরেছেন যে ‘একসঙ্গে থাকা’ মানেই ‘একসঙ্গে সময় কাটানো’ নয়। এখন কম সময় থাকলেও তা মানসম্পন্ন ও গভীর হওয়া উচিত।

গেটওয়ে অব হিলিং-এর প্রতিষ্ঠাতা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. চন্দনী টুগনাইট বলেন, “আগে সবাই চেষ্টা করতো সময় ঠিক করে সব কিছু ফিট করতে, এখন সম্পর্কগুলো সচেতনভাবে সময় বেছে নেয়।”

সময় ঋণ এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন
একজন বেশি ব্যস্ত হলে মনে হতে পারে ‘আমি সময় দিয়েছি, তুমি কেন দাওনি?’ ধীরে ধীরে ‘সময় ঋণ’ তৈরি হয় যা বিরক্তি ডেকে আনে। সময়কে গুরুত্ব দেওয়ায় সম্পর্কের মান উন্নয়ন হয়।

ডেটিংয়ের নতুন মানদণ্ড
সময়ের অভাব এখন রোমান্সের নতুন পরীক্ষণ। ফ্লেক্সিবল ও সময়মতো উপলব্ধ থাকা মানুষকে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। কারণ সঠিক সময় না মেলায় ভালো সম্পর্ক গড়া কঠিন।

সময়ের সংকট মোকাবেলা কীভাবে?

• দৈনন্দিন কাজকর্মকে একসঙ্গে করে সময় কাটানো; যেমন বাজার করা, লন্ড্রি করা বা ব্যায়াম।

• সীমিত সময়ের মধ্যে ছোট ছোট মুহূর্তের গুরুত্ব দেওয়া; একসঙ্গে চুপচাপ থাকা, চোখে চোখ রেখে কথা বলা।

• প্রযুক্তির ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা; নির্দিষ্ট সময় ফোন এবং অন্যান্য ডিভাইস থেকে দূরে থাকার চেষ্টা।

ড. টুগনাইট বলেন, “কম সময় থাকলেও যখন তা বিশেষ হয়ে উঠে, তখন সেই মুহূর্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা বেড়ে যায়।”

শেষ কথা, সময়ের সংকটে প্রেম মানে সবসময় দীর্ঘ ডিনার বা অবকাশ নয়। এটা ছোট ছোট মুহূর্তের গুরুত্ব দেয়া, একসঙ্গে থাকা এবং সম্পর্কের প্রতি সচেতনতা বজায় রাখা।

কারণ আজকের যুগে প্রেম মানে সব সময় থাকা নয়, বরং যেটুকু সময় আছে, সেটাকে মূল্যবান করে তোলা।