ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির জরুরি তথ্য

কোরবানির সরঞ্জাম ও অন্যান্য

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ১২:২৪, ২ জুন ২০২৫

কোরবানির সরঞ্জাম ও অন্যান্য

সেদিন অফিসে আসার পথে টুং টাং শব্দে ফিরে তাকালাম। কামারের দোকান থেকে শব্দটা আসছে। গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি আগুনে তাপ দিয়ে এনে হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল আর মাত্র কয়েকদিন পরই কোরবানির ঈদ। একটুক্ষণ দাঁড়ালাম। দোকানের মালিক কর্মচারী সবাই ব্যস্ত ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি বানানো আর ধার করা নিয়ে। জিজ্ঞেস করল কি নিবেন? বললাম, একটু জানতে চাই আপনাদের ব্যস্ততার কথা। তারা এখন খুব ব্যস্ত। বছরের এ সময়টা ক্রেতা বাড়ে, তাদের ভালো আয় হয়। পশু কেনার পাশাপাশি প্রয়োজন দা, বঁটি, ছুরি, কসাই। কামারপাড়াগুলো তাই এখন মুখরিত। তাই প্রয়োজনের তুলনায় কিছু বেশি সরঞ্জাম তারা এখন তৈরি করে রেখেছে। ঢাকায় সবচেয়ে বড় কামারপাড়া কাওরানবাজার। অন্যান্য জায়গা থেকে তুলনামূলক কম দামে সরঞ্জাম পাবেন এখানে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটা ঘনবসতি সম্পন্ন এলাকায়ও পাবেন কামারের দোকান। যেমন- মালিবাগ বাজার, মগবাজার রেলগেট, পেয়ারাবাগ বাজার, রামপুরা ওয়াপদা রোড। প্রতি কেজি লোহার দাম ৮০০-৯০০ টাকার মধ্যে। সে অনুযায়ী দা, বঁটি, চাপাতির দাম ওজনে যেমন আসে। সাধারণত ১ কেজিতেই বড় ছুরি আর চাপাতি তৈরি করা যায়। এরপর ক্রেতার চাহিদা যেমন হয়। গরু জবাই করার বড় ছুরি ও চাপাতি পাবেন ৯০০-১০০০ টাকার মধ্যে। ছোট ছুরিগুলো সাইজ অনুযায়ী পাবেন ১২০-৩০০ টাকার মধ্যে। একজন ক্রেতা বললেন ট্রাক বা জাহাজের স্প্রিং এর তৈরি সরঞ্জামগুলো বেশি মজবুত আর টেকসই হয়। দোকানিও তাই বললেন। কামারদের অর্ডার করলে তারা ১-২ ঘণ্টার মধ্যেই বানিয়ে দেবে। কাজের চাপ বেশি থাকলে হয়তো একদিন সময় নেবে। আর পুরনোগুলো ধার করাতে ছোট ছুরি নিবে ২০-৩০ টাকা, বড়গুলো ধরন আর সাইজ অনুযায়ী ১৫০-৩০০ টাকা। কোথাও ভেঙে থাকলে তা জোড়া লাগাতে নিবে ৩০০-৫০০ টাকা। 
কোরবানি ঈদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছেÑ ‘কসাই’। ঢাকায় এখন আর কেউ সারাদিন কষ্ট করে নিজে কোরবানির পশু কাটতে চায় না। আগে বাড়ির ছেলেরা উৎসব করে পশু কাটার কাজ করত। এখন বেশির ভাগ বাড়িতেই চুক্তিতে কসাইকে দিয়ে দেয়। বাজারে মাংসের দোকানগুলোতেই মিলবে কসাই। পশুর দাম অনুযায়ী হাজারে ১০০-২০০ টাকা করে নেয়। বিকেলে বা পরদিন হলে ১০০-১৫০ টাকার মধ্যেও পাওয়া যায়। তবে তাদের ২-৩ দিন আগে বলে রাখতে হয়। আবার দরদাম করে ৫-৬ হাজার টাকায় পুরো গরু সুন্দর করে কেটে দেবে এমন চুক্তিতেও পাওয়া যায় কসাই। এছাড়া ঈদের দিন রাস্তায়ও দলবেঁধে থাকে ঢাকার বাইরে থেকে আসা বা দরিদ্র শ্রেণির কিছু মানুষ। তাদের দিয়ে কাটালে আরও কমে পাবেন। তবে পেশাদার কসাই না হলে মাংসের টুকরো ভালো হয় না। দেখে শুনে বুঝে আগে থেকেই সব রেডি করে রাখুন। যেন শেষ মুহূর্তে কোনো সমস্যা না হয়। 
আর গরু-ছাগলের জন্য ঘাস, ভূষি ইত্যাদি খাবার পাবেন যার যার এলাকাতেই। কোরবানির জন্য প্রয়োজন চাটাই, চট, খাটিয়া, মাংস মাপার সরঞ্জাম, পলিথিন ইত্যাদি। আর এখন যেহেতু বৃষ্টির সময়, একটু বাড়তি প্রস্তুতি নিতেই হবে। যেমন ত্রিপল বা বড় ভারি পলিথিন, যাতে বৃষ্টি এলে এগুলো দিয়ে ছাউনি দেয়া যায়। এগুলো এলাকাতেই বিভিন্ন দোকানে পেয়ে যাবেন। আবার হাট থেকে ফেরার পথে সেখান থেকেও নিয়ে আসতে পারেন। বাড়ির ভিতরেই যেন মাংস কাটা যায়, তার একটি ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। যাতে পরে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। আর কোরবানির পর নিজ দায়িত্বে রক্ত, ভুড়ির ময়লাসহ অন্যান্য নোংরা পরিস্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিবেন। এতে পরিবেশ জীবাণুমুক্ত হবে আর দুর্গন্ধও ছড়াবে না।

×