
ছবি: প্রতীকী
‘প্রেম এবং যুদ্ধে সবকিছুই ন্যায্য’ এই প্রবচনটি প্রিয়জনের সঙ্গে কথার ঝগড়ার ক্ষেত্রে ভুল, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রিয়জনকে আঘাত করে কথা বলা একেবারেই ঠিক নয়। পরিবর্তে, ভালোবাসাপূর্ণ, সৎ ও খোলামেলা যোগাযোগই হওয়া উচিত।
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিম ম্যাকনাল্টি, যিনি নতুন বিবাহিত দম্পতি ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন, বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ হলো সরাসরি কথা বলা। পরোক্ষ বা সংকেতমূলক কথা, বিদ্রূপ ভঙ্গিতে কথা বলা কোনো কাজে আসে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের ভিন্নমত থাকা স্বাভাবিক, সেগুলো প্রকাশ করতে হবে, কিন্তু যতটা সম্ভব গঠনমূলকভাবে।’
ঝগড়া করা স্বাভাবিক, তবে ভালোবাসাপূর্ণ হওয়া জরুরি
ঝগড়া করা কঠিন মনে হলেও কেন করবেন? অনেকেই বলেন তারা কখনো সঙ্গীর সঙ্গে ঝগড়া করে না। কিন্তু এটি ভুল ধারণা, বলছেন ম্যাকনাল্টি।
‘ঝগড়া এড়ানো মানে কথাবার্তা এড়ানো,’ বলেন তিনি। “আমি আমার সঙ্গীকে সবসময় বলি, ‘মনে মনে কিছু চেপে না রেখে আমাকে বলো। আমি জানলে হয়তো কিছু করতে পারব।’ না জানলে তো কিছু করা সম্ভব না।”
২০০৮ সালের এক গবেষণায় প্রায় ২০০ দম্পতিকে ১৭ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। যারা তাদের রাগ চাপিয়ে রাখেন, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি দেখা গেছে।
ফিলাডেলফিয়ার সিক্সুয়াল ও কাপল থেরাপিস্ট ক্যাটলিন ক্যান্টর বলেন, ‘ঝগড়া এড়ানো তেমন ভালো কাজ না। ঝগড়ার মাধ্যমে পার্থক্য বুঝে নেওয়া এবং একে অপরের কাছাকাছি আসা ভালো।’
সঠিক সময়ে ঝগড়া করুন
অনেকেই মুহূর্তের উত্তেজনায় ঝগড়া শুরু করেন। ম্যাকনাল্টি বলেন, ‘এসময় নিজেকে সামলানো কঠিন হয়। তবে অনেক সময় পরবর্তীতে অনুতাপ হয়। তাই চেষ্টা করুন সেই সময় এড়াতে।’
ঝগড়ার চাপ অনুভব করলেই একটা সময় ঠিক করে কথা বলুন, যাতে দুজনেই মনোযোগ দিতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ চাপা ক্ষোভ জমিয়ে রাখেন, পরে একবারে ঝগড়া করেন।
‘আলোচনা থামিয়ে একটু বিরতি নেওয়া ভালো,’ ম্যাকনাল্টি বলেন। ‘কিন্তু সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে আপনি সম্পর্কের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সমস্যার সমাধান করবেন, শুধু এই মুহূর্তে সময়টা ঠিক নয়।’
অনুভূতি বিশ্লেষণ করুন
ঝগড়ার জন্য সময় ঠিক করলে নিজের অনুভূতি নিয়ে ভাবার সুযোগ হয়। তবে সব সমস্যাই একসাথে বলবেন না। ম্যাকনাল্টি বলেন, “আমি একে ‘রান্নাঘরের চিন্তা’ বলি—সব ভুল একসাথে ছুড়ে দেওয়া। একবারে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলুন এবং কীভাবে সেটি আপনাকে আঘাত করেছে সেটা জানান।”
ভালো শ্রোতা হোন
অনেকেই ভাবেন ঝগড়ায় নিজেকে প্রকাশ করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শ্রোতাও সমান জরুরি। ম্যাকনাল্টি বলেন, ‘ভালো শ্রোতা হওয়ার মানে হলো নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা। যখন কিছু ভালো না লাগে, তখন প্রতিরক্ষামূলক না হয়ে বুঝবার চেষ্টা করা।’
“বিরতি দিয়ে যা শুনেছেন তা আবার সঙ্গীকে বলুন, ‘আমি কি ঠিক বুঝেছি?’ অনেক সময় সঙ্গী বলে, ‘না, আমি আসলে এটা বলতে চেয়েছিলাম। ঝগড়া করবেন ‘অভিযোগ’ হিসেবে নয়, শান্ত ও নম্রভাবে।’”
অঙ্গভঙ্গি ও ভাষার প্রতি খেয়াল রাখুন
কঠিন সুর বা চোখ ঘোরানো ব্যাপারগুলো খুব ক্ষতিকর, ম্যাকনাল্টি বলেন। ‘গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত রাখুন। আপনার ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি থেকে বোঝা যাবে আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন।’
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
রাকিব