পর্যাপ্ত আয়, কাঙ্ক্ষিত জীবনযাপন, কিংবা ভবিষ্যতের অবসরের জন্য সঞ্চয় অর্থনৈতিক স্বস্তি নির্ভর করে নানা বিষয়ের ওপর। তবে জরুরি খরচের জন্য অন্তত ২ হাজার ডলার সংরক্ষণই মানসিক প্রশান্তিতে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলে।সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ভ্যাঙ্গার্ডের এক গবেষণা।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষের জরুরি ফান্ডে অন্তত ২ হাজার ডলার আছে, তাদের আর্থিক স্বস্তির মাত্রা জরুরি ফান্ড একেবারে না থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। এই জরিপে ভোক্তা আর্থিক সুরক্ষা ব্যুরোর মানদণ্ড অনুযায়ী আর্থিক স্বস্তির মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
ভ্যাঙ্গার্ডের সিনিয়র বিহেভিয়ারাল ইকোনমিস্ট এবং গবেষণার সহ-লেখক পাওলো কস্তা বলেন, “যাদের জরুরি সঞ্চয় রয়েছে, তারা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কম সময় দুশ্চিন্তা করে, কাজের সময়ও কম বিভ্রান্ত হয় এবং সামগ্রিকভাবে বেশি স্বস্তিতে থাকে।”
প্রতিষ্ঠানটি ১২ হাজার ৪০০ জনের বেশি বিনিয়োগকারীর ওপর জরিপ চালিয়ে দেখতে চেয়েছে, অর্থ নিয়ে তাদের মানসিক অনুভব কেমন এবং কী কী বিষয় এতে প্রভাব ফেলছে। যদিও আয় বেশি হওয়া এবং সম্পদের পরিমাণ বাড়াও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে জরুরি ফান্ডে অন্তত ২ হাজার ডলার থাকাই সবচেয়ে বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
অর্থের টেনশন কমলে বাড়ে সময়ের নিয়ন্ত্রণ
জরিপে আরও উঠে এসেছে, পর্যাপ্ত জরুরি সঞ্চয় না থাকলে শুধু মানসিক চাপই নয়, সময়েরও অপচয় ঘটে।গড় হিসেবে, ভ্যাঙ্গার্ডের বিনিয়োগকারীরা প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৪.৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন নিজেদের আর্থিক বিষয় নিয়ে ভাবতে। তবে যাদের জরুরি সঞ্চয় একেবারেই নেই, তারা সপ্তাহে গড়ে ৭.৩ ঘণ্টা সময় এ কাজে ব্যয় করেন। বিপরীতে, যাদের কমপক্ষে ২ হাজার ডলার রয়েছে জরুরি ফান্ডে, তাদের সময় ব্যয় হয় মাত্র ৩.৭ ঘণ্টা।
ভ্যাঙ্গার্ডের অপর গবেষক ও অর্থনীতিবিদ মালেনা ডি লা ফুয়েন্তে বলেন, “জরুরি তহবিল মানে শুধু অর্থ নয়, মানসিক স্বস্তির নিশ্চয়তাও। এটি আপনাকে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার ধাক্কা সামাল দেওয়ার সুযোগ দেয়।”
তথ্য বলছে, যাদের কোনো জরুরি সঞ্চয় নেই, তাদের ৫১ শতাংশ আগের বছরের তুলনায় অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা বেড়েছে বলে জানিয়েছে। বিপরীতে, যাদের অন্তত ২ হাজার ডলার রয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রেই এই দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
জরুরি তহবিলে কত টাকা থাকা উচিত?
অর্থ বিশেষজ্ঞরা বরাবরই পরামর্শ দিয়ে থাকেন, জরুরি খরচের জন্য তিন থেকে ছয় মাসের ব্যয় সংরক্ষণ করার। ভ্যাঙ্গার্ডের গবেষণাও জানায়, এই পরিমাণ সঞ্চয় থাকলে অর্থনৈতিক স্বস্তির মাত্রা গড়ে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে।তবে বাস্তবে এই লক্ষ্য অর্জন অনেকের জন্যই কঠিন, বিশেষ করে যারা মাস শেষে আয় দিয়েই খরচ চালিয়ে যান। তবুও অর্থনৈতিক পরামর্শকরা বলেন, সামান্য হলেও কিছু না কিছু সংরক্ষণ শুরু করলেই মানসিক প্রশান্তি পাওয়া সম্ভব।
সিএনবিসি মেক ইট-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইল কেলার, একজন সনদপ্রাপ্ত আর্থিক পরিকল্পনাকারী ও হিউম্যান ইনভেস্টিংয়ের অংশীদার, বলেন, “আমার মতে, প্রচলিত ‘তিন থেকে ছয় মাসের ব্যয় সঞ্চয়’ ধারণাটি ভালো, তবে এর চেয়েও বড় কথা হলো আপনার ফান্ডে যেন অন্তত কিছু একটা থাকে। কারণ কিছুই না থাকার চেয়ে যেকোনো পরিমাণ সঞ্চয়ই ভালো।”
আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে হলে শুরুটা জরুরি খরচের সঞ্চয় দিয়েই করুন। বড় অঙ্কের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, তবে ছোট পরিমাণ থেকেই শুরু করুন। মনে রাখবেন, সঞ্চয়ের অভ্যাস আপনাকে শুধু আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও আরও স্বস্তি এনে দিতে পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/2acp26tn
আফরোজা
