ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মুকসুদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে মানবেতর জীবনযাপন, ঘর মেরামতে নেই কোনো বরাদ্দ

শরিফুল রোমান, নিজস্ব প্রতিবেদক, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৩০, ২ জুন ২০২৫

মুকসুদপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে মানবেতর জীবনযাপন, ঘর মেরামতে নেই কোনো বরাদ্দ

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত প্রায় ৪০টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। টিনের তৈরি ঘরগুলোর চাল ছিদ্র হয়ে গেছে, বেড়ার টিন নষ্ট এবং কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ায় এসব ঘরে বসবাস এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিগনগর বাজারসংলগ্ন এলাকায় ৪০টি পরিবারকে চারটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে এবং প্রত্যেক পরিবারকে তিন শতক করে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। এক সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করলেও বর্তমানে ঘরগুলোর বেহাল দশার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা রাবেয়া বেগম জানান, "বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতরে পানি পড়ে। শুকনো জায়গায় বসতেও পারি না। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে চরম কষ্টে আছি।" একই অভিযোগ করেন গৃহবধূ ইসমত আরা বেগম। তিনি বলেন, "বিগত সরকারের সময় ঘর পেয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু এখন এই ঘরে থাকা যায় না। মেরামতের সামর্থ্য আমাদের নেই।"

ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করেন, সরকার তাদের ঘরের পাশাপাশি জমির বন্দোবস্তের লিখিত দলিল দিলেও প্রকৃতপক্ষে তিন শতক সম্পূর্ণ জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আগে ঘরের সামনের ফাঁকা জমিতে চাষাবাদ করে খাওয়ার অনুমতি থাকলেও বর্তমানে দিগনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তা সেই জমি ক্ষমতাসীনদের কাছে বন্দোবস্ত দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

রাবেয়া বেগম বলেন, “পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেড়ে গেছে। ছোট জায়গায় বাস করাই কষ্টকর, তার ওপর যদি সামনের জমিটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে পথে বসতে হবে।”

এ বিষয়ে দিগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, “দীর্ঘদিন আগের নির্মিত হওয়ায় ঘরগুলো বর্তমানে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মেরামতের আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসনিম আক্তার জানান, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আপাতত আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। ভবিষ্যতে বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে এলাকাবাসী দ্রুত ঘর সংস্কার ও জমি বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং দাবি জানিয়েছেন, যাতে পরিবারগুলো নিরাপদে ও সম্মানজনকভাবে বসবাস করতে পারে।

নুসরাত

আরো পড়ুন  

×