ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সোশ্যাল মিডিয়ার যেসব ভয়ংকর ফাঁদে পড়ছে তরুণরা

প্রকাশিত: ১৩:৪১, ২ জুন ২০২৫

সোশ্যাল মিডিয়ার যেসব ভয়ংকর ফাঁদে পড়ছে তরুণরা

ছবি: সংগৃহীত।

নতুন প্রজন্মের জীবনে সোশ্যাল মিডিয়া এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকাল শুরু থেকে রাতের ঘুম পর্যন্ত—হাতে ফোন, চোখে স্ক্রিন, আর মনে ভার্চুয়াল জগতের টানাপড়েন। কিন্তু প্রযুক্তির এই উপকারের সঙ্গে এসে গেছে কিছু অদৃশ্য, ভয়ংকর ফাঁদ, যা তরুণদের টেনে নিচ্ছে মানসিক বিপর্যয়, অপরাধের জগৎ ও আত্মবিচ্ছিন্নতার অন্ধকারে।

এই ফিচারে তুলে ধরা হলো এমন কিছু মারাত্মক ফাঁদ, যা আজকের তরুণ সমাজকে নীরবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

১. ডোপামিন অ্যাডিকশন: লাইক ও ফলোয়ারের নেশা
প্রতিটি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার যেন হয়ে উঠেছে আত্মসম্মানের মানদণ্ড। সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম তরুণদের এমনভাবে প্রোগ্রাম করে ফেলেছে যে, তারা ক্রমাগত “ডোপামিন রিওয়ার্ড”-এর খোঁজে থাকে। এই নেশা অনেককে করে তুলছে আত্মমগ্ন, আত্মসমালোচনায় ভুগতে থাকা এবং বাস্তব জীবনের সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন।

২. অবান্তর প্রতিযোগিতা ও শরীরচর্চা-সংশ্লিষ্ট উদ্বেগ
ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে “পারফেক্ট” চেহারা বা লাইফস্টাইল দেখে অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছে। তৈরি হচ্ছে শরীর নিয়ে অসন্তুষ্টি, যা কখনো-কখনো খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, বিষণ্নতা বা এমনকি আত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।

৩. সাইবার বুলিং ও মানসিক ভাঙন
ভার্চুয়াল আক্রমণ এখন আর কল্পনার বিষয় নয়। স্কুল, কলেজের তরুণরা অনলাইন হেনস্তার শিকার হয়ে হারিয়ে ফেলছে আত্মবিশ্বাস, মনঃসংযোগ। অনেক ক্ষেত্রেই তারা পরিবারের কাছে মুখ খুলতে চায় না, যার ফলে বাড়ছে আত্মকেন্দ্রিকতা ও মানসিক অবসাদ।

৪. ভুয়া সম্পর্ক ও প্রেমের ফাঁদ
সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজেই গড়ে উঠছে ভার্চুয়াল প্রেম বা বন্ধুত্ব। কিন্তু অনেক সময় এগুলো হয়ে ওঠে প্রতারণার মাধ্যম। ‘ক্যাটফিশিং’ বা ভুয়া প্রোফাইল ব্যবহার করে প্রতারণা, ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য ফাঁস করে ব্ল্যাকমেইল করার মতো অপরাধ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।

৫. চরমপন্থায় আকৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি
সোশ্যাল মিডিয়ার উগ্র গোষ্ঠীগুলোর প্রচারণা অনেক তরুণকে প্রভাবিত করছে। একাকীত্ব, হতাশা কিংবা পরিচয় সংকট থেকে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে চরমপন্থী চিন্তায়, এমনকি সহিংস কর্মকাণ্ডেও।

৬. নগ্নতা ও ডিজিটাল যৌন হয়রানি
নগ্ন ছবি বা ভিডিও চাওয়ার প্রবণতা, রিভেঞ্জ পর্নের হুমকি, কিংবা টিনএজ ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত ফাঁস করে দেওয়ার ঘটনাগুলো ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। আইন থাকলেও, ভুক্তভোগীদের অনেকে লজ্জা বা ভয় থেকে এগিয়ে আসতে চায় না।


সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের যোগাযোগের দরজা খুলেছে ঠিকই, কিন্তু সচেতনতা ছাড়া এই দরজার ঠিক পেছনেই রয়েছে বিপদের গভীর খাদ। তরুণদের সুরক্ষিত রাখতে চাই পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ। প্রয়োজন আত্মজিজ্ঞাসা, ডিজিটাল শিক্ষায় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং ভার্চুয়াল জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার প্রবণতা।

নুসরাত

আরো পড়ুন  

×