
ছবি: সংগৃহীত।
আকাশ ছোঁয়া জলরাশি দানবের মতো ধেয়ে আসছে, ধ্বংস করে দিচ্ছে শহর, গ্রাম—শুনতে যেন হলিউডের কোনও দুর্যোগ-চলচ্চিত্র। কিন্তু বাস্তবেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার টেক ইউনিভার্সিটির এক সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়াবহ এই পূর্বাভাস।
গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ক্যাস্কাডিয়া সাবডাকশন জোনে যদি আট মাত্রার বা তার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়, তাহলে সেটি সৃষ্টি করতে পারে একটি বিধ্বংসী "মেগা সুনামি"—যার ঢেউ হতে পারে হাজার ফুট পর্যন্ত উচ্চতার।
গবেষক দলের প্রধান টিনা ডুরা জানান, “পরবর্তী ৫০ বছরের মধ্যে এই ধরনের একটি ভূমিকম্পের সম্ভাবনা অন্তত ১৫ শতাংশ।” তার মতে, ভূমিকম্পের ফলে উপকূলীয় ভূমি ৬ ফুট বা তার বেশি দেবে যেতে পারে, আর ঠিক সেই মুহূর্তেই আছড়ে পড়বে জলপ্রাচীরের মতো বিশাল সুনামি।
গবেষণা বলছে, এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ ওয়াশিংটন, উত্তর ওরেগন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। জনবহুল শহর যেমন সিয়াটল ও পোর্টল্যান্ড সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে। এমনকি দূরবর্তী হাওয়াই ও আলাস্কাও রক্ষা পাবে না বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
এধরনের ‘মেগা সুনামি’ নতুন কিছু নয়। ১৯৫৮ সালে আলাস্কার লিথুয়া উপসাগরে ভূমিধস থেকে সৃষ্টি হয়েছিল বিশাল ঢেউ—যার উচ্চতা ছিল ১,৭১৯ ফুট, যা আজও বিশ্বের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সুনামির রেকর্ড। গবেষণায় আরও বলা হয়, প্রায় এক লক্ষ পাঁচ হাজার বছর আগে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জেও প্রায় ১,০০০ ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়েছিল।
সাধারণ সুনামির তুলনায় মেগা সুনামির গতি ও উচ্চতা অনেক বেশি। এগুলোর আগমন অত্যন্ত দ্রুত এবং ধ্বংসযজ্ঞ প্রায় অনিবার্য। গবেষকদের মতে, সতর্কতা ব্যবস্থা থাকলেও এই ধরনের দুর্যোগে জান-মালের ক্ষতি ঠেকানো হবে অত্যন্ত কঠিন।
বিশ্ব এখনও ভুলতে পারেনি ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের সুনামির কথা, যেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৪টি দেশ।
এই গবেষণা সবার জন্য এক স্পষ্ট সতর্কবার্তা—প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে সভ্যতা এখনও কতটা অসহায় হতে পারে।
সূত্র: https://short-link.me/-r0Z
মিরাজ খান