ছবি: সংগৃহীত
দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া কিংবা মতবিরোধ অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে অনেকেই মনে করেন, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রাগ মেটানো জরুরি, না হলে সে রাগ গোপনে বেড়ে যেতেও পারে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, রাগ নিয়ে ঘুমানো সবসময়ই খারাপ নয়, বরং কখনো কখনো সম্পর্কের জন্য এটি উপকারীও হতে পারে।
মেরিল্যান্ডের পোটোম্যাক শহরের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. সামান্থা রডম্যান হুইটেন বলেছেন, ‘অনেকেই এমন বাড়িতে বড় হয়েছেন যেখানে পরিবারের সদস্যদের মাঝে চলত নিয়মিত ঝগড়া, তাই তাদের জন্য রাতের বেলায় ঝগড়া মিটিয়ে না ঘুমানো একদমই স্বাভাবিক ব্যাপার নয়।’
নিউইয়র্কের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. সাবরিনা রোমানোফ বলছেন, “‘রাগ নিয়ে কখনো ঘুমোবেন না’ এই কথাটি অনেক সময় মূলত সম্পর্কের সুষ্ঠু সংযোগ বজায় রাখার জন্যই বলা হয়। কারণ অমীমাংসিত রাগ গভীর বিরক্তি ও দূরত্ব বাড়াতে পারে।”
কিন্তু এই নিয়ম সব সময়ই কাজে দেয় না। অনেক সময় রাতে ঝগড়া মেটানোর জন্য না ঘুমাতে পারাই বেশি ক্ষতি করে। ক্লান্ত অবস্থায় আমরা সহজেই গলা উঁচু করতে পারি, এমন কথা বলতে পারি যা পরে আফসোসের কারণ হয়।
ডা. রোমানোফ বলেন, ‘একজন ভালো ঘুমানো মানুষ পরবর্তী দিনে সমস্যা শান্তভাবে ও যুক্তিবাদীভাবে বুঝে নিতে পারে, যা সম্পর্কের জন্য অনেক ভালো।’ তাই অনেক ক্ষেত্রেই ঝগড়ার সমাধান পরের দিনের জন্য রেখে দেওয়াই শ্রেয়।
যদি রাতেও রাগ মেটানো সম্ভব না হয়, তাহলে কী করবেন? ডা. রডম্যান হুইটেন বলেন, এটা হতে পারে ‘attachment panic’ — অর্থাৎ সম্পর্ক নিয়ে ভয় বা উদ্বেগ, যা আমাদের নিরাপত্তাহীনতা বোধ করায়।
তবে এই অবস্থায় ঝগড়া নিয়ে তাড়াতাড়ি মীমাংসা করার চেষ্টাই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। বরং দুইজনই যখন মানসিকভাবে শান্ত থাকবেন, তখন ঝগড়ার সমাধান ভালো হয়।
তাদের পরামর্শ হলো:
- ঝগড়া মিটিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সময় ঠিক করুন যখন দুজনেই ভালো মেজাজে থাকবেন,
- ঘুমানোর আগে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলা, আলিঙ্গন বা চুমু দেয়ার মতো ছোট ছোট ভালোবাসার রীতিনীতি বজায় রাখুন,
- নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা লেখালেখি করুন,
- নিজেকে প্রশ্ন করুন, ‘আমি কীভাবে এমন আচরণ করব যাতে ভবিষ্যতে আমরা শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য কাটাতে পারব?’
রোমানোফ আরও বলেন, ‘ঘুমাতে যাওয়ার আগে রাগ মেটানো না পারলেও, সম্পর্কের প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করা জরুরি — তা হতে পারে মাত্র এক শব্দ, বা হালকা একটি চুমু।’
শুধু রাগকে অস্বীকার না করে, সম্পর্কের বন্ধনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ঘুমানো উচিত।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
রাকিব
