ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নগদের গ্রাহকদের টাকা ঝুঁকিতে রয়েছে: বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২ জুন ২০২৫

নগদের গ্রাহকদের টাকা ঝুঁকিতে রয়েছে: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি: সংগৃহীত।

দেশের অন্যতম মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ লিমিটেডের গ্রাহকদের অর্থ ও ব্যক্তিগত তথ্য বর্তমানে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নগদ’-এর ব্যাংক হিসাবগুলোর স্বাক্ষরদাতা পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির মাধ্যমে পরিচালিত ফরেনসিক অডিট কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই অডিটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনা যাচাই করা হচ্ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে জানা গেছে, প্রকৃত অর্থ জমা না রেখেই ‘নগদ’ অতিরিক্ত অন্তত ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি ইস্যু করেছে। এতে করে ডাক বিভাগের মাধ্যমে সরকারেরও সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, এই ধরনের কার্যক্রম দেশের বৈধ মুদ্রানীতি ও অর্থ ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একচেটিয়া অর্থ ইস্যুর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে।

এছাড়া অনুমোদনবিহীন ৪১টি পরিবেশকের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা ‘নগদ’ থেকে উত্তোলন করা হয়েছে, যা মূলত বিভিন্ন সরকারি ভাতা বিতরণের অর্থ ছিল। এ ঘটনায় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও জানা গেছে, একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ১৮,২৩৩ জন গ্রাহকের হিসাবে বেআইনিভাবে অর্থ পাঠানোর ফলে ‘নগদ’-এর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা।

সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ‘নগদ’ নিয়ে একটি আধা-সরকারি চিঠি দেন, যা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবৃতিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের একটি স্থগিতাদেশের ফলে নিয়োজিত প্রশাসক দল ৭ মে থেকে ‘নগদ’-এর কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছে না।

এই সুযোগে মামলার আসামি ও ‘নগদ’-এর সাবেক এমডি তানভীর আহমেদ মিশুক নিজেকে বৈধ ব্যবস্থাপনা পরিচালক দাবি করে অপর আসামি শাফায়েত আলমকে ই-মেইলের মাধ্যমে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এই নিয়োগে কোনো পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছিল না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে প্রশাসক দলের ই-মেইল, ফাইন্যান্স ও আইটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণ এবং ই-মানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমগুলোতে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ১২ মে থেকে নিয়োজিত প্রশাসক দল কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ আর রাখছে না।

সবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, কেপিএমজির মাধ্যমে ‘নগদ’-এর পূর্ণাঙ্গ ফরেনসিক অডিট পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বর্তমানে অডিটরদের কোনো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না, যার ফলে অডিট কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘গুরুতর ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং মনে করছে, ‘নগদ’-এর গ্রাহকদের অর্থ ও তথ্য বর্তমানে চরম অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে।

নুসরাত

×