ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অধ্যাদেশ জারি

শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ৪ জুন ২০২৫

শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল

শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের (এমএনএ/এমপিএ) মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে এসব নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসেলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারই নন, আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা হলেন- প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্ব জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দ্বিতীয়ত, যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দূতসহ অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তৃতীয়ত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। বাতিল হওয়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুসহ প্রবাসী সরকারের এমএনএ বা এমপিএ এবং উল্লেখিত চার শ্রেণির সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। নতুন অধ্যাদেশে তাদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী করার ফলে তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতি বাতিল হয়ে গেল।
মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনীতিবিদদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল নিয়ে তীব্র সমালোচনা দেখা দেয়। এ পর্যায়ে গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার শর্তে খসড়াটি অনুমোদন করা হয়। এর পর আইন মন্ত্রণালয় সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আজ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের প্রণীত খসড়া থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী ধারা ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। 
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকে খসড়াটি অনুমোদনের পরেও দ্বিতীয় দফায় তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্থ যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

এ ছাড়া যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এ দেশে সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এই রূপ সবাই বেসামরিক নাগরিক ওই সময়ে যাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও ওই সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্য এবং বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত নাগরিকরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন, যথা (ক) হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা) এবং (খ) মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারী।’
অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পরিবর্তিত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে রাইফেলস, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’

×