
ক্যান্সার, কিডনি, লিভার চিকিৎসায় দেওয়া হবে আর্থিক সহায়তা
জটিল চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এ লক্ষ্যে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও থ্যালাসেমিয়ার মতো জটিল ও দুরারোগ্য ব্যাধির সহায়তায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আবেদনকারী রোগীকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হতে পারে। এর পাশাপাশি ক্যান্সার, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ডায়াবেটিস ও ঠান্ডা জ্বরের মতো সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা এবং ওষুধের দাম কমানোর উদ্যোগ রয়েছে বাজেটে। আগামী সোমবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ নতুন বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে এসব বিষয়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েক দশকে দেশের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ওষুধের দাম বৃদ্ধি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মেডিক্যাল টেস্টের খরচ অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি। চিকিৎসা ব্যয় এখন সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। দীর্ঘদিনের এই সঙ্কট থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে এবারের বাজেটে বেশকিছু উদ্যোগ রয়েছে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, মূলত ওষুধের কাঁচামাল এবং হাসপাতালে ব্যবহার হয় এমনসব মেশিনারিজ ও অন্য সরঞ্জামাদি আমদানিতে অতিরিক্ত ভ্যাট ও শুল্ক দিতে হচ্ছে।
ফলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব পণ্য আমদানিতে যদি ভ্যাট ও শুল্ক কমিয়ে আনা হয় তাহলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে আসবে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই জনস্বার্থে ওষুধের দাম কমিয়ে আনা এবং চিকিৎসা ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার।
এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষণা দেওয়া হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসন্ন বাজেটে ওষুধের কাঁচামাল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামাদি আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা হবে। বাজেটে শুল্কমুক্ত তালিকায় এ খাতের নতুন ৭৯টি পণ্য রয়েছে। মূলত ওষুধ প্রস্তুতকারকদের উপর চাপ কমানো এবং ক্যান্সার, কিডনি এবং রক্তরোগের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে, সরকার ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত ২৩টি নতুন কাঁচামাল, ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের জন্য ৩৬টি এবং ২০ ধরণের চিকিৎসা সরঞ্জামের উপর আমদানি শুল্ক মওকুফ করার পরিকল্পনা করেছে। বর্তমানে কমপক্ষে আরও ২০০টি ওষুধ পণ্য আমদানিতে এরকম শুল্ক ছাড় রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা উন্নত করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, সরকার-হাসপাতাল কর্তৃক চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানির উপর বিদ্যমান ১০ শতাংশ শুল্ক মওকুফ করার পরিকল্পনা করছে। ভ্যাকসিন উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি।
এ প্রযুক্তি এগিয়ে নিতে ট্যানজেনশিয়াল ফ্লো ফিল্টারেশন (টিএফএফ) সিস্টেমের আমদানির উপর শুল্ক কমিয়ে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। এছাড়াও, ওষুধ প্রস্তুতকারকদের দ্বারা সাধারণত ব্যবহৃত এইচএস কোড ৩৯১৭.৩৯.৯০-এর অধীনে তালিকাভুক্ত আমদানির উপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া ইনসুলিনের দাম কমানো হবে বলে জানা গেছে। বেসরকারি খাতের হাসপাতালের উদ্যোক্তারা বলছেন, স্বাস্থ্যখাতের বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী জানান, চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। সবার সুচিকিৎসা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
বিশেষ করে ওষুধ ও হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা গেলে রোগীরা স্বস্তি পাবেন। এজন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, হাসপাতাল সরঞ্জামাদি ও মেশিনারিজের বেশিরভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। অথচ এসব মেশিনারিজ ও অন্য সরঞ্জামাদি আমদানিতে বড় অঙ্কের ভ্যাট ও শুল্ক রয়েছে। ফলে চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অথচ আমদানি শুল্ক কমানো হলে চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি জানান, ডেঙ্গু ও করোনাসহ বেশকিছু রোগের মেডিকেল টেস্টের খরচ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করা আছে। এভাবে প্রতিটি টেস্টের খরচই নির্ধারিত হতে পারে।
সেক্ষেত্রে কাঁচামাল ও মেডিকেল সরঞ্জামাদি আমদানি সহজলভ্য করতে হবে। ওষুধের কাঁচামাল আমদানি ও অন্য সরঞ্জামাদি আমদানিতে শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটি চমৎকার পদক্ষেপ হবে। জানা গেছে, ক্যান্সার চিকিৎসার ২৩ ধরনের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক সহজ করার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে অনুরোধ জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের ওষুধসহ কিছু জীবনরক্ষাকারী ওষুধের উপর এখনও উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা ক্রয়ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। তবে শুল্ক কমানো হলে উৎপাদন খরচ কমে আসবে এবং এর ফলে এসব ওষুধের দামও হ্রাস পাবে। রোগীরা স্বল্পদামে গুরুত্বপূর্ণ এসব ওষুধ কিনতে পারবেন।