
ছবি: সংগৃহীত
স্ট্রোক এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে আশার কথা হচ্ছে—প্রায় ৮০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য, যদি আপনি ঝুঁকির বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং এখন থেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেন।
যেসব ঝুঁকি আপনি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের বড় কিছু ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়—
-
উচ্চ রক্তচাপ
-
হৃদরোগ
-
ডায়াবেটিস
-
ধূমপান
-
আগের হালকা স্ট্রোক বা TIA
-
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
-
উচ্চ কোলেস্টেরল
-
অতিরিক্ত ওজন
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত শরীরচর্চা—এই তিনটি বিষয় মেনে চললে আপনি স্ট্রোক থেকে অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারেন।
যেসব ঝুঁকি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না
আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কিছু স্ট্রোক ঝুঁকি হলো—
-
বয়স
-
লিঙ্গ
-
পারিবারিক ইতিহাস
-
জাতিগোষ্ঠী বা বংশগততা
-
পূর্বে স্ট্রোক বা TIA হওয়ার ইতিহাস
বিশেষ করে বয়স ৬৫-এর আগে যদি আপনার বাবা-মায়ের কারও স্ট্রোক হয়ে থাকে, তাহলে আপনার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এই বিষয়গুলো আপনার চিকিৎসককে অবশ্যই জানান।
স্ট্রোক আসলে কী?
স্ট্রোক হয় যখন মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বা কোনো রক্তনালী ফেটে গিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ব্রেইনের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকেই মনে করেন তরুণ বয়সে স্ট্রোক হয় না। এটি একটি ভুল ধারণা। বর্তমানে তরুণরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন, বিশেষ করে যারা—
-
উচ্চ রক্তচাপ বা স্থূলতায় ভোগেন
-
ধূমপান বা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন
-
পারিবারিকভাবে ঝুঁকিতে আছেন
-
মাথায় আঘাত বা রক্তনালীর গঠনে সমস্যা রয়েছে
খাবার ও ব্যায়ামের গুরুত্ব কতটা?
সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিনের খাবার ও শরীরচর্চার ভূমিকা অপরিসীম। করণীয়—
-
প্রচুর শাকসবজি ও ফল খান
-
চিনি, চর্বি ও লবণ কম খান
-
সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হালকা থেকে মাঝারি ব্যায়াম করুন
স্ট্রোক ও মানসিক চাপ
স্ট্রোক সরাসরি মানসিক চাপের কারণে হয় না, তবে চাপ রক্তচাপ, রক্তে চিনি ও চর্বির পরিমাণ বাড়ায়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি কেন?
স্ট্রোক পুরুষ ও নারী উভয়েরই হতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার কিছুটা বেশি। বিশেষ কারণগুলো—
-
জন্মনিয়ন্ত্রণ ট্যাবলেট গ্রহণ
-
হরমোন থেরাপি
-
গর্ভাবস্থা
-
প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া (প্রেগনেন্সির সময় উচ্চ রক্তচাপ)
স্ট্রোক প্রতিরোধে ৮টি অভ্যাস
আজ থেকেই এই কাজগুলো শুরু করুন:
-
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
-
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
-
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
-
ধূমপান ও তামাক বর্জন করুন
-
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
-
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন
-
রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখুন
-
ভালো ঘুম নিশ্চিত করুন
স্ট্রোক প্রতিরোধ করা আপনার হাতে। নিজে সচেতন হোন, পরিবার-পরিজনকেও সচেতন করুন। আজ থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন—কারণ একটু সাবধানতা আপনাকে রাখতে পারে বহুদিন সুস্থ ও নিরাপদ।
আবির