
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার (কোলন ক্যান্সার) মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশটিতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি নতুন রোগী ধরা পড়বে এবং প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ এই ক্যান্সারে প্রাণ হারাতে পারে।
তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজি (ASCO) সম্মেলনে চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার ওপর নতুন গবেষণায় আশাপ্রদ ফলাফল উঠে এসেছে।
গবেষণাগুলো থেকে জানা গেছে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম ক্যান্সার প্রতিরোধ ও রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও সামগ্রিকভাবে কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের শনাক্তের হার কমছে, তবে যুবকদের মধ্যে এই রোগের হার বাড়ছে। গবেষকরা বলছেন, ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ক্যান্সারে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯০০ জন কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের রোগীকে নিয়ে এক গবেষণা চালানো হয়। সবাই কেমোথেরাপি সম্পন্ন করেছিল। তাদের অর্ধেককে সুস্থ জীবনযাপনের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বই দেওয়া হয়, বাকি অর্ধেকের সঙ্গে তিন বছর ধরে একজন পরামর্শদাতা যুক্ত ছিলেন। যারা পরামর্শদাতার সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম করেছেন, তাদের মধ্যে নতুন ক্যান্সার বা পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি ২৮% কম পাওয়া গেছে। ব্যায়াম পরামর্শদাতার সঙ্গে থাকা রোগীদের পাঁচ বছরের রোগমুক্ত জীবিত থাকার হার ৮০% ছিল, যেখানে শুধু পুস্তিকা (দিকনির্দেশনামূলক বই) পাওয়া রোগীদের হার ছিল ৭৪%।
কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি প্রফেসর ড. ক্রিস্টোফার বুথ বলেছেন, ‘ব্যায়ামের প্রভাব অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের অনেক উন্নত ওষুধের থেকেও বেশি।’ তাই ব্যায়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার চিকিৎসার অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত।
আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রদাহ-হ্রাসকারী খাদ্য যেমন কফি, চা ও সবুজ শাকসবজি বেশি খাওয়া এবং উচ্চ মাত্রার শারীরিক ক্রিয়াকলাপে যুক্ত থাকা রোগীদের মৃত্যুহার ৬৩% কম। যেখানে যারা অধিক পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত মাংস, চিনির পানীয় বেশি খাচ্ছেন, তাদের ঝুঁকি ছিল বেশি।
ডানা-ফারবার ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. সারা চার বলেন, ‘ক্যান্সার বৃদ্ধিতে প্রদাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেটা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া। যুবকদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বৃদ্ধির পেছনে পরিবেশগত কারণগুলো যেমন খাদ্য, জীবনধারা এবং রাসায়নিকের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ।’
ড. বুথ বলেন, ‘রোগীদের জন্য এটি অনেকটাই ক্ষমতাবর্ধক, কারণ এটি সম্ভব এবং অর্জনযোগ্য। অধিকাংশ রোগী সপ্তাহে তিন-চার দিন এক ঘণ্টার দ্রুত হাঁটার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।’
এছাড়া, ফাইজারের নতুন ওষুধ ‘ব্রাফটোভি’ নিয়ে এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ওষুধটি একসঙ্গে কেমোথেরাপি ও অ্যান্টিবডি ওষুধের সঙ্গে ব্যবহার করলে আগ্রাসী কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের রোগীদের জীবদ্দশা দ্বিগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। গড়ে ৩০ মাস পর্যন্ত তারা বেঁচে থাকেন, যা আগের ১৫ মাসের চেয়ে বেশি। ব্রাফটোভি একটি লক্ষ্যভিত্তিক ওষুধ যা একটি বিশেষ প্রোটিনের মিউটেশন ঠেকায়।
ফাইজার সিইও ড. আলবার্ট বুরলা বলেন, ‘এই ধরনের লক্ষ্যভিত্তিক চিকিৎসা গত ২০ বছরে ক্যান্সার চিকিৎসায় এক বড় অগ্রগতি।’
নতুন এই গবেষণা কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সূত্র: সিএনএন।
রাকিব