ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঢাকা ছাড়ছে লাখো মানুষ, যানজটে আটকে ঈদের স্বপ্নভ্রমণ

আল জুবায়ের, ঢাকা

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ৩ জুন ২০২৫

ঢাকা ছাড়ছে লাখো মানুষ, যানজটে আটকে ঈদের স্বপ্নভ্রমণ

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আশায় রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন লাখো মানুষ। শহরের দীর্ঘ যানজট, অনিয়ন্ত্রিত হর্ণ ও ধুলাবালির ক্লান্তিকর পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে শুরু হয়েছে গ্রামমুখী স্বপ্নের যাত্রা।

মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী বাস টার্মিনাল, মাজার রোড, শ্যামলী, কলাবাগান ও সায়েদাবাদ এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ব্যাপক ভিড় ও উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে হঠাৎ বৃষ্টিতে পড়তে হয় বেশ কিছুটা ভোগান্তিতে। অনেককে ভিজেই ছুটতে দেখা গেছে গন্তব্যের দিকে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। এবারের ঈদের সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলে যাওয়ায় তারা বেশ উচ্ছ্বসিত। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী জুলফিকার আলি জানান, “বছরে দুটো ঈদেই শুধু বাড়ি যাওয়া হয়। শহরের যানজট আর কোলাহল ভালো লাগে না, মন সবসময় বাড়ির জন্য পড়ে থাকে।”

অন্যদিকে, সরকারি চাকরিজীবীদের ঈদের ছুটি শুরু হবে ৫ জুন থেকে, চলবে টানা ১৪ জুন পর্যন্ত। তবে অনেকে এখনও ছুটি পাননি। ঠিক এমনই একজন আজাদ হোসেন, যিনি নিজে যেতে না পারলেও স্ত্রী ও দুই সন্তানকে পৌঁছে দিতে এসেছিলেন শ্যামলী বাস কাউন্টারে। বলেন, “রোজার ঈদে গিয়েছিলাম গ্রামে, কয়েকদিন ছিলাম, শান্তির একটা অনুভব। এবার যেতে পারলাম না। চাকরির কারণে শহরেই আটকে আছি।”

বাস টার্মিনালগুলোতে এবার ভিড় তুলনামূলক কম থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। যেমন, রয়েল পরিবহনের মাজার রোড-চুয়াডাঙ্গা রুটে নন-এসি বাসে ৬৫০ টাকার জায়গায় ভাড়া রাখা হচ্ছে ৭৫০-৮৫০ টাকা পর্যন্ত, এসি বাসের ১২০০ টাকার ভাড়া রাখা হচ্ছে ১৬০০-১৮০০ টাকা। কাউন্টার কর্তৃপক্ষের দাবি, ঈদ উপলক্ষে সব বাস কোম্পানির ভাড়াই বেড়েছে।

কমলাপুর রেলস্টেশনেও যাত্রীদের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। যদিও এবছর আগের মতো টিকিট কালোবাজারির দৃশ্য নেই বলে জানিয়েছেন অনেক যাত্রী। যেহেতু এখন সব টিকিট অনলাইনে, তাই ভোগান্তি কিছুটা কম। তবে সিট না পেয়ে অনেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়েই ফিরছেন বাড়ির পথে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে ছয়টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। কিছু ট্রেন সাময়িক বিলম্ব হলেও অধিকাংশ ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে।

ব্যাংক কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত বলেন, “টিকিট পাওয়া যেন যুদ্ধ জেতার মতো। যাঁরা ঢাকায় থাকেন, তাঁরা জানেন ঈদের সময় বাড়ি ফেরা কতটা কষ্টসাধ্য। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের আনন্দই আলাদা।”

গৃহিণী ফাহমিদা আক্তার বলেন, “এবার একটু স্বস্তিতে যেতে পারছি। শহরের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রামে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। দুই সন্তানকে নিয়ে অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছি। শ্বশুরবাড়ি, বাবার বাড়ি সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।”

ঢাকা শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে স্বজনদের কাছে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানীবাসীর এই স্বপ্নযাত্রা অব্যাহত থাকবে আরও কয়েকদিন। সেই যাত্রা কখনও বৃষ্টিতে ভিজে, কখনও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে, আবার কখনও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও তবুও ঈদের টানে ফিরে যাওয়া, এই শহরের প্রতিটি মানুষের এক চিরচেনা চিত্র।

মিমিয়া

×