ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফুলবাড়ীতে গর্ত আর রেলিংবিহীন সেতু এখন মরণফাঁদে পরিণত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফুলবাড়ী,  কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৩ জুন ২০২৫

ফুলবাড়ীতে গর্ত আর রেলিংবিহীন সেতু এখন মরণফাঁদে পরিণত

দৈনিক জনকণ্ঠ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পাটাতনে গর্তে ভরা  রেলিং বিহীন একটি সেতু এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিদিন ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। উপজেলার বড়ভিটা বাজার-বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সড়কের বামনেরকুড়া নালার উপর নির্মিত সেতুর রুগ্ণ দশায় পথচারীসহ বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর সেতুটি সংস্কারের আশ্বাস দেয়াড় বছরের পর বছর পার হলেও হয়নি সেতুটির সংস্কার। ফলে ক্ষুব্ধ যাতায়াতকারীরা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর পাটাতনের নানা জায়গায় পলেস্তারা খসে গিয়ে রড বের হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। খুঁজেই পাওয়া যায় না সেতুর দুই পাশের রেলিং এর দিশা।

সেতুর রেলিং এর দিশা খুঁজে পাওয়া না গেলেও জীবন-জীবিকার দিশা খুঁজতে নানা প্রয়োজনে এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর উপর দিয়েই বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করছেন অনেক মানুষ।

এছাড়াও বড়ভিটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই সেতুর উপর দিয়েই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।

সেতুর আশপাশের গ্রামের প্রসূতি মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা নিতে সেতুটি দিয়ে বড়ভিটা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা-যাওয়া করছেন। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোন সময় প্রাণহানির মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। 

সেতু অদূরের বাসিন্দা ও বড়ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর ছাত্তার খন্দকার বলেন, 'সেতুটি দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যাতায়াত করে। সেতুর পাটাতনে গর্ত আর রেলিং না থাকায় যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। সেতুটি সংস্কার জরুরি।

'স্থানীয় সরলা রানি বলেন, সেতুতে গর্তের কারণে কোন যানবাহন যাতায়াত করতে পারেনা। আজকে আমার গর্ভবতী মেয়েকে নিয়ে পায়ে হেঁটে ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে।'

আসাদুল হক, শহিদুল ইসলাম, মানিক মিয়াসহ বেশ কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ' সেতুটি দিয়ে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াত করতে ভয় পায়। আমরাও ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তায় থাকি। না জানি কখন কি ঘটে। এভাবে আর কতদিন চলবে? আমরা এখানে একটা প্রশস্ত সেতু নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।' 

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, সেতুটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে যাতায়াতে জনগণের ভোগান্তি তুলে ধরতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। তবে কাজের কাজ হয়নি কিছুই।

তিন বছর আগে সেতুটির বিষয়ে তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল রাজিব বলেছিলেন, সেতুটি প্রশস্ত করে নতুনভাবে নির্মাণের জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেছিলেন, একই বছরের শেষ নাগাদ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। কিন্তু প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলেও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটির বিষয়ে দেখা যায়নি কারো কোন উদ্যোগ।  

বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জান্নাতি খাতুন বলেন, 'সেতুর বেহাল দশার কারণে ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় মালামাল আনা নেয়া করতে অসুবিধা হচ্ছে।

স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জনভোগান্তি নিরসনে সেতুটি পুনঃনির্মাণের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।'

উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান বলেন, ' সেতুটি পুনঃনির্মাণের জন্য প্রাক্কলন ও নকশা প্রণয়ন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সেতু পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।'

হ্যাপী

×