ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রামে দেশের প্রথম মনোরেল, চুক্তি স্বাক্ষর

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২ জুন ২০২৫

চট্টগ্রামে দেশের প্রথম মনোরেল, চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি:সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরীতে দেশের প্রথম মনোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। যানজট নিরসন ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চসিক সম্প্রতি জার্মানির ওরাসকম এবং মিশরের আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (MoU) স্বাক্ষর করেছে।

 

 

রোববার (১ জুন) সকালে চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা, নগরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

চুক্তি অনুযায়ী, ওরাসকম ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ মিলে নগরীতে মনোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করবে। সফলতা পাওয়া গেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) মডেলে।

 

 

প্রস্তাবিত মনোরেল প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনায় রয়েছে তিনটি রুট:

লাইন-১: কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর (২৬.৫ কিমি) – বহদ্দারহাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ানহাট ও পতেঙ্গা হয়ে।
লাইন-২: সিটি গেট থেকে শহীদ বাশিরুজ্জামান স্কয়ার (১৩.৫ কিমি) – এ.কে. খান, নিমতলী, সদরঘাট ও ফিরিঙ্গি বাজার হয়ে।
লাইন-৩: অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গি বাজার (১৪.৫ কিমি) – মুরাদপুর, পাঁচলাইশ, আন্দরকিল্লা ও কোতোয়ালি হয়ে।

 

 

সম্পূর্ণ বিদেশি বিনিয়োগে বাস্তবায়ন

চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, এই প্রকল্পে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে ওরাসকম ও আরব কন্ট্রাক্টরস। এতে চসিকের কোনো আর্থিক দায় থাকবে না। সিটি করপোরেশন শুধু লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দ দেবে।

মেয়রের ভাষায়, “এই মনোরেল প্রকল্প শুধু যানজট নিরসনের মাধ্যম নয়; বরং এটি চট্টগ্রামকে একটি পরিবেশবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব ও পর্যটনবান্ধব নগরীতে রূপান্তরের পথে এগিয়ে নেবে।”

 

চসিক কর্মকর্তারা জানান, মনোরেল হচ্ছে একক রেলপথে চলা একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা, যা সাধারণত উঁচু পিলারের ওপর দিয়ে চলে। এটি মেট্রোরেলের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ খরচ সাশ্রয়ী এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সহজে স্থাপনযোগ্য। দ্রুত নির্মাণযোগ্য এই প্রযুক্তি ইতোমধ্যে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারতের বিভিন্ন শহরে সফলভাবে চালু রয়েছে।

 

আরব কন্ট্রাক্টরস ও ওরাসকম পেনিনসুলা কনসোর্টিয়ামের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ কাউসার আলম চৌধুরী বলেন, “চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী, যেখানে যানজট ও পরিবহণ সংকট ক্রমেই বাড়ছে। মনোরেল একটি আধুনিক ও টেকসই সমাধান। আমরা এখানে পূর্ণাঙ্গ বিনিয়োগে আগ্রহী।”

তিনি আরও বলেন, “রাজস্ব কেবল টিকিট থেকেই নয়, বরং স্টেশন এলাকায় দোকানপাট, বিজ্ঞাপন এবং আশপাশের সম্পত্তিমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমেও অর্জিত হবে। একটি উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থায় ৫-৭ গুণ পর্যন্ত অর্থনৈতিক রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।”

 

গ্রেটার চিটাগাং ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এই মনোরেল প্রকল্প চট্টগ্রামকে একটি স্মার্ট, টেকসই ও যুগোপযোগী নগরীতে রূপান্তরের দিকে নিয়ে যাবে। আমরা নাগরিক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবো।”

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২১ সালেও কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান মনোরেল প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে তা বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামের গণপরিবহন খাতে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে।
 

আঁখি

×