ছবি: জনকণ্ঠ
ময়মনসিংহের ত্রিশালে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জমি-সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জেরে ঘর ভাঙচুর ও মালামাল বিনষ্টের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ত্রিশাল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
জানা গেছে, উপজেলার বাগান গ্রামের মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে ফারুখ আহমেদ (৫৭) ও মৃত খেসাল উদ্দিনের ছেলে আঃ রাজ্জাক (৫৮) গংদের সঙ্গে জমির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত সোমবার (২ জুন) সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে আঃ রাজ্জাক গংরা ফারুখ আহমেদের ভোগদখলকৃত জমিতে হামলা চালিয়ে বসতঘর ভাঙচুর ও ঘরের মালামাল বিনষ্ট করে এবং কিছু মালামাল নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীরা ত্রিশাল থানাকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ফারুখ আহমেদ বাদী হয়ে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে সোমবার রাতে ত্রিশাল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তদের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন বিষয়সহ সম্পত্তির সীমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। পাশাপাশিই বসবাস করায় অভিযুক্তরা প্রায়ই বাড়িতে এসে ঝামেলা করতো। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সোমবার সকাল ৮টার দিকে তারা বসতবাড়িতে প্রবেশ করে টিনের বেড়া ও ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ অন্যান্য মালামাল ভাঙচুর করে এবং অর্থসহ অনেক মালামাল নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী মোছা. নূরুন্নাহার বলেন, "এই জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। ঘরের ভিতরে অনেক টাকার সম্পদ ছিল, সব নষ্ট করে ফেলেছে। অনেক খড় ছিল, সেগুলোও নিয়ে গেছে।"
ভুক্তভোগী শাহরিয়ার ইমন বলেন, "সকালে তারা এসে বলে ঘরের ভেতরে যা কিছু আছে, সব নিয়ে যেতে—না হলে কিছুই থাকবে না। আমি বলি আমরা আদালতে মামলা করেছি, আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আদালত যদি আপনাদের পক্ষে রায় দেয়, আমরা জমি বুঝিয়ে দেবো। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। এক পর্যায়ে তারা ভাঙচুর শুরু করলে আমি ৯৯৯-এ কল দিই এবং থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।"
স্থানীয় মো. শেখ মিরাজ বলেন, "এই জমি নিয়ে এর আগেও একাধিকবার সালিশ হয়েছে, কিন্তু কোনো মীমাংসা হয়নি। থানায়ও সালিশ হয়েছে, তবুও সমাধান হয়নি। জমিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে—এটি আমি শুনিনি।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বৃদ্ধা বলেন, "ফারুখের জমি জোর করে নেওয়ার লাইগা রাজ্জাকরা উঠেপড়ে লেগেছে। ফারুখরা কি আর করবে, মার খেয়ে খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফারুখের লোকজন কম, ওদের তো অনেক মানুষ।"
ভুক্তভোগী ফারুখ আহমেদ বলেন, "বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে বিরোধের কারণে একের পর এক অন্যায় ও অত্যাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় মীমাংসা এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সোমবার সকালে আঃ রাজ্জাকরা লোকজন নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়, ঘরের টিনের বেড়া ও বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং টাকা-পয়সা নিয়ে যায়।"
অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বলেন, "আমরা পাঁচ ভাই মিলে আমাদের জায়গা পরিষ্কার করে ঘর নির্মাণ করবো। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জায়গা পরিষ্কার করতে গেলে তারা থানায় পুলিশ নিয়ে আসে।"
ত্রিশাল থানার এএসআই আউয়াল জানান, "আমরা ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।"
ত্রিশাল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোবারক হোসেন জানান, "ঘটনার বিষয়ে সোমবার রাতে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
এম.কে.
