ঢাকার কোলঘেঁষে কেরানীগঞ্জ উপজেলার রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নিভৃত এক আবাসিক প্রকল্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক অপূর্ব স্থাপত্যকীর্তি—সাউথ টাউন জামে মসজিদ। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের মেলবন্ধনে এই মসজিদ এখন কেবল নামাজ আদায়ের স্থান নয়, হয়ে উঠেছে দর্শনার্থী ও পরিবেশ সচেতন পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
প্রায় দুই বছর ধরে নির্মাণের পর ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এই মসজিদটি। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই মসজিদটি আধা বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে। একসঙ্গে ৬৫০ থেকে ৭০০ জন মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর ১৪৫টি ছোট-বড় গম্বুজ, যা এক নজরেই দর্শকের দৃষ্টি কাড়ে। পাশাপাশি শতাধিক রঙিন কাঁচের জানালা দিয়ে প্রবাহিত হয় প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস, যা অভ্যন্তরীণ পরিবেশে সৃষ্টি করে এক প্রশান্তিময় আবহ।
প্রবেশপথে রয়েছে তিনটি প্রধান গেট, পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ পাশে আরও দুটি কাঠের ফটক। প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সুপরিকল্পিত ওজুখানা এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনদের থাকার সুব্যবস্থা। মসজিদের পাশেই আলাদা একটি ভবনে ইমাম ও খাদেমদের থাকারও আয়োজন করা হয়েছে।
আর যে বিষয়টি মসজিদটিকে আলাদা পরিচয় দেয়, তা হলো এর প্রাকৃতিক পরিবেশ। বিস্তৃত মাঠ, চারপাশে কাশফুলের ছড়াছড়ি, খোলা আকাশ ও নিঃশব্দ এক গ্রামীণ পরিবেশ সব মিলিয়ে এটি যেন প্রকৃতি ও প্রার্থনার এক অপূর্ব সম্মিলন।
রাজেন্দ্রপুরের সাউথ টাউন আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে অবস্থিত এই মসজিদে যেতে হলে ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে রাজেন্দ্রপুর নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারের একটু আগে নামতে হবে। সেখান থেকে ডানদিকে মোড় নিলেই চোখে পড়ে সাউথ টাউন জামে মসজিদ।
এই মসজিদ কেবল নামাজ আদায়ের স্থান নয়, বরং বাংলাদেশের আধুনিক ধর্মীয় স্থাপত্যে এক নতুন সংযোজন। প্রতিদিন এখানে ভিড় করেন স্থানীয় মুসল্লিদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা, যাঁরা খুঁজে পান এক প্রশান্ত, নির্মল ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ।
সাউথ টাউন জামে মসজিদ এখন কেরানীগঞ্জের গর্ব এবং দেশের ধর্মীয় পর্যটন মানচিত্রে এক সম্ভাবনাময় নাম। এটি প্রমাণ করে, প্রযুক্তি ও নান্দনিকতার সংমিশ্রণে ধর্মীয় স্থাপনাও হতে পারে পরিবেশবান্ধব ও পর্যটনমুখী।
মিমিয়া
