ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চিনির কারণে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কৃমি সমস্যা নিয়ে সতর্কতা

প্রকাশিত: ০১:০০, ১ জুন ২০২৫

চিনির কারণে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কৃমি সমস্যা নিয়ে সতর্কতা

সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে শিশুদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, এক বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের খাদ্যে অতিরিক্ত চিনি (অ্যাডেড সুগার) যুক্ত না করাই নিরাপদ। এমনকি ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের জন্যও চিনিযুক্ত খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস (AAP) এবং ইউনিসেফ (UNICEF) বলছে, শিশুরা যখন খাওয়া শেখে তখনই তাদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে ওঠে। এই সময়ে মিষ্টিজাত খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হলে ভবিষ্যতে তা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, দাঁতের ক্ষয় এবং হজমের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

কৃমির সমস্যা এবং ঔষধ না দেওয়ার কারণ:

  • শিশুদের মধ্যে কৃমির সমস্যা খুবই সাধারণ। অনেক অভিভাবক সহজে উপশমের জন্য শিশুকে ঔষধ দিয়ে দেন, যা সব সময় উপকারী নয়। পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত চিনি খেলে কৃমির বৃদ্ধি বাড়তে পারে, কারণ চিনি কৃমির জন্য পুষ্টির উৎস। তাই চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • এছাড়া, অযথা ঔষধ দেওয়া শিশুর শরীরের পদ্ধতিগত প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং অনেক সময় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, কৃমির চিকিৎসা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন কেন চিনি ক্ষতিকর শিশুর জন্য:

  • চিনি খেলে শিশুদের পেট ভরে যায়, কিন্তু প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেলে না। এতে অপুষ্টি তৈরি হয়।
  • চিনি দাঁতে ক্যাভিটি সৃষ্টি করে, এমনকি দুধ দাঁতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • খাওয়ার স্বাভাবিক অভ্যাস নষ্ট হয়, শিশুরা শুধুই মিষ্টি খাবার খেতে চায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে অতিরিক্ত চিনি খেলে।

পুষ্টিবিদরা আরও জানান, শিশুরা প্রাকৃতিক মিষ্টির (যেমন ফলমূল) স্বাদ থেকে পুষ্টি পেতে পারে। যেমন কলা, পেঁপে, আপেল প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি, যা পরিমিতভাবে শিশুর খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফা সুলতানা বলেন, “অনেক বাবা-মা ভাবেন একটু মিষ্টি খাওয়ালেই ক্ষতি নেই, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস শিশুদের দেহে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। তাই দুধ, ফলমূল, সবজি দিয়েই শিশুর স্বাভাবিক খাবার তৈরি করা উচিত।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে বাবা-মায়ের সচেতনতা এবং সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি। শিশুর ভবিষ্যতের সুস্থ জীবন গঠনে এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।

পরামর্শ

  • ১ বছরের নিচে শিশুদের কোনোভাবেই চিনি, মধু বা লবণ দেওয়া উচিত নয়।
  • ১–৩ বছর বয়সের মধ্যে মিষ্টিজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • কৃমির চিকিৎসা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে ঔষধ দেবেন না।
  • শিশুর খাদ্যে প্রাকৃতিক মিষ্টি এবং পুষ্টিকর খাবার দিন।

“স্বাস্থ্যকর শিশু মানেই সুস্থ জাতি, তাই শুরু হোক স্বাস্থ্যসচেতন অভিভাবকত্ব থেকেই।”
 

হ্যাপী

×