
ছবিঃ সংগৃহীত
দীর্ঘদিন ধরে ওজন বৃদ্ধি ও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ানোর জন্য দায়ী হিসেবে চিহ্নিত আলু এখন পুষ্টিবিদদের নজরে ফিরে এসেছে একটি স্বাস্থ্যবান খাদ্য উপাদান হিসেবে। সম্প্রতি একাধিক পুষ্টিবিদের বক্তব্য ও গবেষণায় উঠে এসেছে— সঠিকভাবে রান্না ও পরিমিত মাত্রায় খেলে, আলু হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১৬শ শতকে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ইউরোপে আগত এই কন্দজাত সবজিটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ রান্নাঘরের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কম-কার্ব বা উচ্চ প্রোটিন খাদ্যচর্চার কারণে অনেকের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ছে আলু।
তবে পুষ্টিবিদ সোফি ট্রটম্যান বলছেন, “অনেকেই আলুকে অবমূল্যায়ন করেন। অথচ এটি উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন – বিশেষ করে আঁশ, রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ।”
আলুর পুষ্টিগুণ:
পুষ্টিবিদদের মতে, একটি মাঝারি আকারের আলুতে রয়েছে:
- ভিটামিন C ও B6
- পটাশিয়াম, ফোলেট ও ম্যাগনেসিয়াম
- রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে
- ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- স্বল্প ক্যালোরি এবং উচ্চ পরিপূর্ণতা (satiety)
পুষ্টিবিদ রব হোবসনের ভাষায়, “আলু অন্যান্য অনেক কার্বসের তুলনায় বেশি সময় পেট ভরা রাখে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হতে পারে, যদি সঠিকভাবে খাওয়া হয়।”
আলুর ঝুঁকি ও সতর্কতা:
তবে আলুর কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে। এতে প্রোটিন ও চর্বি প্রায় নেই বললেই চলে, ফলে একে একমাত্র উৎস হিসেবে গ্রহণ না করে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া, আলু উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সবিশিষ্ট হওয়ায় ডায়াবেটিসপ্রবণদের জন্য পরিমাণে সীমাবদ্ধ থাকা জরুরি।
সবুজ হয়ে যাওয়া বা চারা গজানো আলুতে ‘সোলানিন’ নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়, যা হজমজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে এগুলো কাটিয়ে ফেলা হলে সাধারণত খাওয়া নিরাপদ।
কোনভাবে খেলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর?
নিচে জনপ্রিয় আলু প্রস্তুত প্রণালির পুষ্টিমূল্য দেওয়া হলো (প্রতি ১০০ গ্রামে):
- সিদ্ধ আলু – ৮৬ ক্যালোরি, ০.১ গ্রাম চর্বি
- বেকড আলু – ৯৩ ক্যালোরি
- রোস্টেড আলু – ১২০ থেকে ১৬০ ক্যালোরি (তেলের পরিমাণ অনুযায়ী)
- ম্যাশড আলু – ১৮৭ ক্যালোরি, ৯.৪ গ্রাম চর্বি
- চিপস (দোকানের) – ২০২ ক্যালোরি, ৭.১ গ্রাম চর্বি
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ— আলু খোসাসহ রান্না করা উচিত, কারণ খোসাতেই থাকে অধিকাংশ আঁশ ও পুষ্টিগুণ। মাখন বা ক্রীমের পরিবর্তে অলিভ অয়েল এবং দুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাদা না মিষ্টি আলু?
মিষ্টি আলুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আঁশ বেশি থাকলেও, সাদা আলুও প্রায় সমান স্বাস্থ্যকর। ইউকন গোল্ড, রাসেট বা মারিস পাইপার— প্রায় সব জাতের সাদা আলুর পুষ্টিমূল্য কাছাকাছি। তবে আলু রান্নার ধরনই এর স্বাস্থ্যপ্রভাব নির্ধারণ করে বেশি, জাত নয়।
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ:
- প্রতিদিনের কার্বোহাইড্রেটের একটি অংশ আলু দিয়ে পূরণ করা যেতে পারে
- একইসঙ্গে সবজি ও প্রোটিন যুক্ত করে ব্যালান্সড খাবার তৈরি করতে হবে
- দোকানের প্রক্রিয়াজাত (ফ্রোজেন) আলু বা চিপস এড়িয়ে চলতে হবে
- ঠান্ডা, অন্ধকার জায়গায় আলু সংরক্ষণ করাই শ্রেয়
একসময় যে আলু ছিল প্রতিটি ঘরের নিত্যসঙ্গী, সেটিই এখন ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনেকের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ছে। অথচ পুষ্টিবিদরা বলছেন— নিয়ম মেনে, স্বাস্থ্যকরভাবে রান্না করে এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে, আলু হতে পারে আধুনিক স্বাস্থ্য সচেতন সমাজের জন্যও এক উপকারী খাদ্য উপাদান।
মারিয়া